মেহেরপুরে সোলার পাম্প গ্রামীণ অর্থনীতিতে
মেহেরপুর জেলায় তেল ছাড়াই ভূগর্ভস্থ পানি চলে যাচ্ছে কৃষকের আবাদি জমিতে। কেবল ধান নয়, সেচের এই পানি ব্যবহার করা হচ্ছে কলার বাগানে, সবজির জমিতে। পুরো জেলার আবাদি জমি সোলার পাম্পের আওতায় আনলে কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলায় বিপ্লব ঘটবে সেচ সুবিধার কারণে। সোলার পাম্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড লাইনে সংযুক্ত করলে দেশে বিদ্যুৎ সংকট দূর হয়ে যাবে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় ২০ হর্স পাওয়ারের ২৪টি ও সাড়ে ৭ হর্স পাওয়ারের ১১টি সোলার সেচ পাম্প চালু রয়েছে। এছাড়া নদ-নদী কেন্দ্রিক সেচ পাম্প রয়েছে ৩০টি, ভূগর্ভস্থ সোলার সেচ পাম্প রয়েছে ৩৩টি।
নদ-নদী কেন্দ্রিক সেচপাম্প থেকে প্রতিদিন ৩০ বিঘা জমি এবং ভূগর্ভস্থ মিনি সেচপাম্প থেকে প্রতিদিন ৩০ বিঘা জমি সেচসুবিধা পাচ্ছে। ২০ হর্স পাওয়ার সোলার সেচপাম্প নির্মাণে ৫৬ লাখ টাকা ও সাড়ে ৭ হর্স পাওয়ারে খরচ হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের অনুকূলে ৩ হাজার একর জমি সেচের আওতায় নেয়া আছে।
এদিকে মেহেরপুর জেলায় প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমিতে সোলার সেচ পাম্পের কারণে জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে সোলার পাম্প গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। স্বল্প খরচে কৃষকরা তাদের কৃষি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সেচ সুবিধা ভোগ করায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এ প্রযুক্তির চাহিদা। মাঠে মাঠে এখন নতুন করে সম্প্রসারিত হচ্ছে ব্যাটারিবিহীন সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প। ফলে এ জেলায় এখন দেখা দিয়েছে সবুজ কৃষি বিপ্লবের অপার সম্ভাবনা।
জানা গেছে, মুজিবনগর সেচ প্রকল্পের আওতায় এসব পাম্প স্থাপন হয়েছে, যার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে চাষিদের বিদ্যুতের অপেক্ষায় থাকতে হয় না। কিংবা ছুটতে হয় না ডিজেল চালিত পাম্প মালিকদের কাছে। স্বল্প খরচে সব ধরনের ফসলে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন চাষিরা।
প্রতিটি সোলার সিস্টেমে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পাম্পগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার ইউনিট বিদ্যুতের সাশ্রয় হচ্ছে। এগুলো ঝামেলা ছাড়াই টানা ২০ বছর সার্ভিস দেবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মেহেরপুর বিএডিসির প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, কৃষি উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন তথ্য প্রযুক্তির সমন্বিত ব্যবহার করে কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে হবে। সেকেলে আর মান্ধাতার আমলের কৃষি উৎপাদন পদ্ধতির বদলে আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।