মেহেরপুরে সার ও তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে মাথার হাত রোপা আমন ধান চাষীদের
কামাল হোসেন খাঁনঃমেহেরপুর জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় আমন রোপা ধান আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে। উক্ত লক্ষমাত্রা অর্জনে সরকারের বরাদ্দকৃত আমন রোপা ধানের প্রণোদনা সহায়তা নিয়ে খুশি হতে পারেনি কৃষকরা। তাছাড়া বাজারে ইউরিয়া সারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিসহ ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে আমন রোপা ধান আবাদে কৃষকরা একেবারে অপারগ হয়ে গেছে। সরকার নির্ধারিত ইউরিয়া সারের মূল্য খুচরা পর্যায়ে ২২ টাকা কেজি হলেও পাইকারি বাজারেই ১২’শ টাকায় প্রতি ব্যাগ ইউরিয়া সার ক্রয় করছেন ব্যবসায়ীরা। যা খুচরা বাজারে ২৩ টাকা কেজি দরে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। ডিজেলের মূল্যও কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে বললে ভুল হবেনা। কারণ আমন রোপা আবাদে সেচের জন্য যে পরিমাণ ডিজেল প্রয়োজন তা ক্রয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের।
দেশের বিভিন্ন জেলায় সার সংকটের খবর শোনা গেলেও মেহেরপুর জেলায় সারের কোন সংকট নেই। তবে সার, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে বলে জানান অনেকে। সার, ডিজেল পর্যাপ্ত চাহিদা থাকলেও সরকারের নির্ধারিত মূল্যে পাচ্ছেন না কৃষকরা। চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পেলেও তা বেশি মূল্যে বিক্রি করছেন ডিলাররা।গত ২৮ জুলাই কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন ‘আগামী বোরো মৌসুম পর্যন্ত দেশে সারের কোনো সমস্যা হবে না। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’ কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন ! ইউরিয়া সারের মূল্য আরো তীব্র হবে আশংকা করে অনেক কৃষক অতিরিক্ত সার কিনে মজুত করছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে মেহেরপুরে সবজির সিজেন শুরু হতে যাচ্ছে। সারের মূল্য বৃদ্ধি ও সংকট সৃষ্টি হলে সবজি চাষও ব্যহত হবে বলে আশংকায় রয়েছেন কৃষকরা।
এমতবস্থায় সরকারের অতিরিক্ত সার বরাদ্দ দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
বর্তমানে কৃষকেরা সার নিতে এসে মূল্য বেশি হওয়ায় তারা পরিমাণ মতো সার না কিনে স্বল্প পরিসরে কিনে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। তিনারা জানান, এতো দামে সার, ডিজেল ক্রয় করা প্রায় অসম্ভব। মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কোন কোন ব্যবসায়ী বলছেন, সরকারের বরাদ্দের বাহিরেও সার আমদানি করতো অনেকে যা এখন বন্ধ আছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেশি তাই অনেকে সার আমদানি করছে না।
এদিকে জেলার হাসানাবাদ গ্রামের চাষী কুতুবউদ্দিন মুলুক জামান, ৩ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছি। এছাড়াও ২ বিঘা জমিতে আউশ ধান রয়েছে। ভরা আষাঢ় ও শ্রাবনে বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতে টানা সেচ দিতে হচ্ছে। তারপর বেড়েছে সারের দাম। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অচল হয়ে পড়েছে পানির মটর।
এতে করে লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। একই এলাকার কৃষক মকছেদ জানান, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চাষাবাদ নিয়ে হতাশায় ভুগছি। তেলের দাম না কমলে চাষে লোকসান হবে বলেও জানান।
বারাদী গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, তেল, সারের দাম এতো বেশি হলে চাষাবাদ করা অসম্ভব।
বারাদী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বদিউজ্জামাল বাবু মিয়া বলেন, এবছরে রোপা আমন চাষ করতে পারলাম না।
প্রতিবছর ২/৩ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করলেও এবছর তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আবাদ কমিয়ে দিয়েছি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে জনৈক কৃষক জানান, রোপা আমন বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি নেই। ফলে বিঘা প্রতি সেচ বাবদ অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা বেশি গুনতে হবে। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
হাসানাবাদ গ্রামের ইমাদুল জানান, ধানের জমি নিড়ানি, কাটা, লাগানো ও ধান মাড়াই করা সব কাজেই মুনিষ লাগছে। কিন্তু মজুরি খরচ বৃদ্ধি ও ডিজেল চালিত পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ, ধান বাড়িতে আনা ও ধান মাড়াই।
সহ সবমিলিয়ে ২৫/ ৩০ হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে।
ভাটপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য হযরত আলী জানান, কৃষি নির্ভর এই দেশে সার, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে এক সময় কৃষকরা চাষ ছেড়ে দিবে। তিনি জানান, কৃষকদের এখন বড় সমস্যা হচ্ছে সেচ ও সার। এই দু’টোর দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে মানুষ নিজে খাওয়ার জন্য ছাড়া বিক্রির জন্য ধান চাষ করাতে আগ্রহ হারাবে।
একই গ্রামের পিন্টু মিয়া জানান, আউশ ও আমন ৬ বিঘা ধান চাষে সার, ডিজেলের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা লাভবান হবেননা।
তিনারা জানান, জ্বালানি তেলের মুল্য বৃদ্ধির কারণে ধনী-গরিব সকল কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। অনেক কৃষক ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ঠিকমতো সেচ দিতে পারছে না। যে কারণে এলাকায় রোপা আমন ও সবজি চাষে লোকসানের আশংকা করছেন তারা।
কসবা গ্রামের ওহাব আলী জানান, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সেচসহ অন্যান্য খরচ দ্বিগুন বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষে এবার লোকসান গুনতে হবে। অধিকাংশ কৃষকই সার ও তেলের মূল্য কমানোসহ আমন রোপা ধানের আবাদে অধিক হারে প্রণোদনা সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।