মেহেরপুরে লাভবান হচ্ছেন লাউ চাষীরা
লাউ শীতকালীন সবজি হলেও সারাবছর ধরেই মেহেরপুর জেলায় লাউয়ের আবাদ হয়ে থাকে। গত কয়েকবছর ধরে লাউয়ের মূল্য বৃদ্ধি এবং লাউ চাষে খরচ কম হওয়ায় চাষীদের অনেকেই লাউ চাষ করে আসছেন। ইতিপূর্বে পূর্বেও ৫ টাকায় ২ টা লাউ নেওয়ার লোক না পাওয়া গেলেও বর্তমান বাজারে প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকায়। যা ঢাকা, বরিশাল, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয় ৪০-৬৫ টাকায় কিংবা তারও বেশি মূল্যে। লাউ এক প্রকার লতানো উদ্ভিদ যা এর ফলের জন্যে চাষ করা হয় এবং কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে খাওয়া ও পরিপক্ব অবস্থায় শুকিয়ে এটি বোতল, পাত্র বা নল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ কারণেই লাউ এর ইংরেজি নাম হয়েছে Bottle gourd। তবে মেহেরপুরে আঞ্চলিক ভাষায় লাউকে কদু বলা হয়ে থাকে।
লাউ পৃথিবীর অন্যতম পুরনো চাষ হওয়া সবজি হলেও মেহেরপুরে লাউ চাষীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। করমদী
সন্ধানী হাসপাতালের প্রাক্তন মেডিকেল অফিসার, বর্তমান মেহেরপুরে অবস্থানকারী ডাঃ আবু সাঈদ গাংনীর চোখ’কে বলেন, ডায়রিয়া জনিত পানি শূন্যতা দূরীকরণ, ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক রাখা, প্রস্রাবের সংক্রমণ জনিত সমস্যা দূরীকরণ, কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও উচ্চ রক্তচাপ বিশিষ্ট রোগীদের জন্য লাউ আদর্শ সবজি। এছাড়াও কোষ্ঠ কাঠিন্য, অর্শ, পেট ফাঁপা প্রতিরোধ, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও নিদ্রাহীনতা দূর করে পরিপূর্ণ ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে লাউ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও গাংনী ডক্টর’স পয়েন্ট কনসালটেশন সেন্টারের স্বনামধন্য ডাঃ এম সজীব উদ্দীন স্বাধীন গাংনীর চোখ’কে বলেন, লাউয়ে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা শরীরের ঘামজনিত লবণের ঘাটতি দূর করে। দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে। ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও লাউ যথেষ্ট উপকারী। নিয়মিত লাউ সবজি খেলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পেকে যাওয়ার হার কমায়।
মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দেশী ও হাউব্রিড জাতের লাউ চাষ হয়ে থাকে। কেউ সবজি হিসেবে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকেন কেউবা বীজ তৈরিতে লাউ চাষ করেন।
মাইলমারী এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ গাংনীর চোখ’কে জানান, পলিথিন ব্যাগে বীজ রোপণের ৫-৭ দিনের মধ্যে চারা গজায়। জমিতে চারা রোপণের প্রায় ৪৫ দিনের পর লাউ ক্ষেতে ফুল থেকে কাঙ্খিত লাউ পাওয়া যায়।
তিনি জানান, ২ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের লাউ চাষ করেছি। আজই প্রথম লাউ বিক্রি শুরু করলাম। দাম ভালো হওয়ায় আশানুরূপ মূল্য পাবেন বলে আশাবাদী।
লক্ষ্ণীনারায়ণপুর গ্রামের মাহবুবুর রহমান সুমন জানান, লাউ চাষ লাভজনক। গত ৩ মাস পূর্বে মাচায় লাউ চাষ করে আশানুরূপ ফলন ও লাভ হয়েছে। একই জমিতে আবারও লাউ চাষের জন্য জমি চাষ ও বীজ রোপন ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
জেলার সাহারবাটী, শ্যামপুর, আমঝুপি, নওপাড়া, মাইলমারী, হিন্দা, কাথুলী, কাজীপুর, হাড়াভাঙ্গা, বন্দর, মোনাখালী, নূরপুর, পিরোজপুর, মটমুড়া, হরিরামপুরসহ অসংখ্য গ্রামের চাষীরা লাউ চাষে ব্যস্ততার মধ্যে সময় পার করছেন।
হাড়াভাঙ্গা গ্রামের লাউ চাষী ইউসুফ আলী গাংনীর চোখ’কে জানান, আমি মাত্র ১১ কাঠা জমিতে হাউব্রিড জাতের লাউ চাষ করে ভাল লাভবান হয়েছি। অল্প জমিতে প্রচুর লাউ ধরে যা থেকে প্রতি ১ দিন পর পর ১৭০ থেকে ২০০ টি লাউ বাজার জাত করি। প্রতিটা লাউ ২০-২২ টাকায় বিক্রি করেছি। এপর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি।
একই গ্রামের লাউ চাষী ওমর আলী গাংনীর চোখ’কে জানান, জমি প্রস্তুত, সার, মাচা তৈরীতে বাঁশের খুটি, সূতা, তার, নেট এবং শ্রমিক খরচসহ বিঘা প্রতি জমিতে ২৫-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রতি ১/২ দিন পর প্রায় ৩/৫শ’ লাউ বাজার জাত করা যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সেখান থেকে সকল খরচ বাদ দিয়ে ৩ মাসে কমপক্ষে ২ লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব।
পীরতলা গ্রাামের লাউ ব্যবসায়ী আন্টু গাংনীর চোখ’কে বলেন, সাহারবাটীসহ বেশ কিছু গ্রামের অনেকেই সবজি কিংবা লাউ চাষ করে লাখপতি বনে গেছেন। এদের মধ্যে হাউব্রিড জাতের লাউ চাষীর সংখ্যায় বেশি। তাছাড়া হাইব্রিড জাতের কিছু লাউয়ে পোকা মাকড়ের আক্রমনও কম হয়। মূলতঃ গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে লাউ কিনে স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে তিনি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাকযোগে পাঠিয়ে থাকেন। এখান থেকে ১৮-২২ টাকা প্রতি পিস কিনে থাকেন। যা ঢাকার বাজারে ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি হয় বলে তিনি জানান।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় লাউ চাষ বাড়ছে। এক্ষেত্রে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আধুনিক প্রযুক্তি ও পরামর্শ নিয়ে চাষীদের লাউ চাষে সহযোগিতা করছেন।