মেহেরপুরে প্রকৌশলীর সহযোগিতায় অতিরিক্ত ৩২ লাখ টাকা বিল উত্তোলন বদলি নির্বাহী প্রকৌশলী। হদিস নেই ঠিকাদারের

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  04:14 PM, 27 November 2024

মেহেরপুরের গাংনীতে নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদার যোগসাজগে একটি দাখিল মাদ্রাসার নির্মান কাজ শেষ না করে অতিরিক্ত ৩২ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করা হয়েছে। বিল উত্তোলনের পরপরই নরসিংদী বদলী হয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী আর ঠিকাদার হয়েছেন লাপাত্তা। ফলে ভবন নির্মান কাজ পড়ে রয়েছে একারনে খোলা আকাশের নীচে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এনিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে দ্রত ভবন নির্মান ও দোষি ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসি।
জানা গেছে, ২০১৮/১৯ অর্থ বছরে মাদ্রাসা উন্নয়ন প্রকল্পে আওতায় গাংনী উপজেলার করমদি দারুসুন্নাহ নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় ৪ তালা বহুতল ভবনের কাজ পায় কুষ্টিয়ার আনিসুর রহমান নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৭৫ ভাগ। তার বিপরীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল দেয়া হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫ হাজার টাকার। কাজ শেষ না করার পরও ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। এছাড়াও কাজ শেষ হওয়ার আগেই পিজি (পার্সোনাল গ্যারান্টেড) থাকা প্রায় ১৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুত্তাকিনের সহযোগিতায় উত্তোলন করেন ঠিকাদার। এদিকে কাজের শুরুতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ উঠলেও কর্তৃপক্ষ তাতে কর্নপাত না করায় কাজ চালিয়ে যায় ঠিকাদার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার ভবন নির্মান কাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা মেঝে ও পরিত্যক্ত বিল্ডিং গুলোতে ক্লাস করছেন।
জান্নাতুল নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, ভবন না থাকাই শিক্ষা কার্যক্রম ও বিভিন্ন ব্যবহারিক ক্লাস থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এক রুমেই অনেকজন আবার কখনও কখনও খোলা আকাশের নিচে ও মেঝেতে বসে ক্লাস করতে হয়। সঠিকভাবে লেখাপড়ার পরিবেশ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীরা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান তারা। শিক্ষার্থীদের দাবী, নব নির্মিত ভবনের কাজ শেষ করে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে অঅনার দাবি করেন।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু জাফর জানান, পরিত্যাক্ত বিল্ডিং এর শিক্ষা পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় ঝড় বৃষ্টির সম্মুখক্ষণ হতে হয়। অন্যদিকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক ক্লাসসহ অন্যান্য ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিংয়ের কাজ দ্রুতই শেষ করে হস্তান্তর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন নুর ইসলাম ইতোপূর্বে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি মো: সাহিদুজ্জামান খোকনের নিকট আত্নীয় হওয়ার কারনে জোর পূর্বক জেলার বাইরের ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ নিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। ইতোপূর্বে তেরাইল গ্রামের একটি রাস্তার এইচবিবি কাজে নিম্নমানের ইট বালি ব্যবহার করার কারনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার ও প্রকাশিত হয়। পরে সেই ইটবালি উত্তোলন করে পুনরায় নতুন ইট বালি দিয়ে কাজ শেষ করে।
মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান জানান, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কি কারণে অতিরিক্ত ৩২ লাখ টাকা বিল দিয়েছেন বিষয়টি আমার জানা নেই।
অতিরিক্ত বিল কিভাবে দেওয়া হলো এবিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের মেহেরপুরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বর্তমানে নরসিংদী জেলায় কর্মরত গোলাম মুস্তাকিন সংবাদটি প্রচার না করার অনুরোধ জানান।
তিনি আরো বলেন আনিসুর রহমানের কাজ গাংনীর নুর ইসলাম নামের এক ঠিকাদার কিনে বাস্তবায়ন করছেন। নুর ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদটি না লেখার অনুরোধ করেন।
কুষ্টিয়ার ঠিকাদার আনিসুর রহমানের সাথে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

আপনার মতামত লিখুন :