মেহেরপুরে চিনাবাদামের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
মেহেরপুরে চিনাবাদামে বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। বর্তমান হাট বাজারে বাদামের বাজার মূল্যও বেশ ভালো। এতে করে বাদাম চাষিরা ভীষণ খুশি। তবে বাদাম রোপনের পর থেকেই ঘনঘন বৃষ্টিপাত হওয়ায় ফলন গতবারের তুলনায় এবার অনেক কম হয়েছে বলে বাদাম চাষিরা জানান।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর সদর উপজেলায় চিনাবাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হেক্টর জমিতে। তবে চাষ হয়েছে ২৫ হেক্টর জমিতে। কতটুকু অর্জিত হয়েছে তার সঠিক তথ্য এখনও পাওয়া যায় নি।
একইসময়ে গত মৌসুমে চিনাবাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ হেক্টর জমিতে। যাতে উৎপাদন হয় ৫৪ মেট্রিকটন চিনাবাদাম।
সূত্র মতে জানা যায়, মেহেরপুর সদর উপজেলা ছাড়া মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলাতে চিনাবাদামের চাষ করা হয়না। তবে নদী এলাকার কিছু কিছু জায়গায় বাদাম চাষ চোখে মেলে।
মূলত মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর ও কুতুবপুর ইউনিয়নেই বেশি বাদাম চাষ হয়ে থাকে। বালি মাটিতে বাদাম চাষ ভালো হয়ে থাকলেও আলমপুর, সুবিদপুর এবং মদনাডাঙ্গা এলাকায় বেলে দোঁয়াশ মাটিতেও কৃষকরা ভালো ফলন পেয়েছেন।
ইতিমধ্যে জমি থেকে বাদাম উঠানো শুরু হয়েছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার নতুন মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি ফজলুল হক জানান, ২ বিঘা ৫ কাঠা জমিতে চিনাবাদামের চাষ করেছি। বাদাম চাষে খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বাদাম চাষ করে থাকি।
তিনি জানান, বীজ বপনের ৩ মাসের মধ্যেই বাদাম উঠানো যায়। সার, সেচ কিংবা কীটনাশকের তেমন একটা প্রয়োজন পড়েনা। তবে প্রখর রোদে দু’একবার সেচ দিতে হয়। মাঝে আগাছা নিধনে একবার নিড়ানির প্রয়োজন পড়ে। বাদাম উঠানোর সময় থেকে বাদাম গাছ থেকে বাদাম ছাড়ানো পর্যন্ত একটু খরচ হয়ে যায় বলে তিনি জানান।
ফজলুল হকের সহধর্মিণী ফজিলা খাতুন জানান, বিয়ের পর থেকেই প্রায় ৫০ বছর ধরে আমরা বাদামের চাষ করে থাকি। বীজের মূল্য অনেক বেশি। ২ বিঘা জমিতে চিনাবাদাম চাষে প্রায় ৯ হাজার টাকার বীজ, সেচ ও নিড়ানিতে প্রায় ৩ হাজার, জমি থেকে বাদামগাছ তোলা ২ হাজার ৫’শ, গাছ থেকে বাদাম ছাড়ানোই ৫ হাজার ৫’শ এবং বাদাম পরিষ্কারের জন্য ৫’শ টাকা খরচ গুনতে হয়েছে। তবে বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত বাদাম বিক্রি করে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা জমবে। বাড়ি থেকে ব্যবসায়ীরা ৫ হাজার টাকা মন হিসেবে ক্রয় করতে চাচ্ছেন।
সুবিদপুর গ্রামের কয়েকজন বাদাম চাষির সাথে আলাপকালে তিনারা জানান, এবছরে বাদাম উৎপাদনে সার, বীজ, শ্রমিকসহ খরচ হয়েছে প্রতি বিঘা জমিতে ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘা জমিতে বাদাম উৎপাদন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মন। বর্তমান বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ৪৫’শ থেকে ৫ হাজার টাকা মন। এ হিসেবে প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত বাদামের মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা যা, উৎপাদন খরচ থেকে অনেক বেশি। ফলে বাদাম চাষিরা বর্তমান বাজার মূল্যে অত্যন্ত খুশি। যদিও গতবার ফলন আরো বেশি হয়েছিল।
গাংনী উপজেলার করমদী সন্ধানী হাসপাতালের সাবেক মেডিকেল অফিসার বর্তমান মেহেরপুর শহরে অবস্থানকারী ডাঃ আবু সাঈদ জানান, দেশী বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, ই, ডি রয়েছে। ফলে স্মৃতিশক্তি প্রখর করতে বিশেষ ভাবে কাজ করে। মস্তিস্কের যে কোষগুলো স্মৃতি সংরক্ষণ করে নিয়মিত বাদাম খেলে সে কোষগুলো সজাগ থাকে। তিনি শিশুদের নিয়মিত বাদাম খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। এতে করে তারা প্রখর মেধাশক্তির অধিকারী হতে পারে বলে জানান।