ভারী বর্ষণে মেহেরপুরে ভুট্টার বাম্পার ফলন থেকে বঞ্চিত কৃষক
মেহেরপুরে ভুট্টা চাষে বাম্পার ফলনের আশা করলেও ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় ১৩ হাজার ৩ শত ৩০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে, মুজিবনগর উপজেলায় ১ শত ৮৩০ হেক্টর এবং গাংনী উপজেলায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে।
একইসাথে ভুট্টা উৎপাদনে কৃষি প্রণোদনা সহায়তা হিসেবে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ বিতরণসহ সকল ধরনের পরামর্শ দিতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা।
আবাদের শুরু থেকেই কিছু সময় ঝড় ও বজ্রবৃষ্টি হলেও আবহাওয়া সহায়ক হওয়ায় ভুট্টা চাষে তেমন একটা সমস্যা হয়নি। ফলে কৃষকরা ভুট্টা চাষে সাফল্য আশা করেছিলেন। সে ব্যাপারে দ্বিমতও ছিলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। কৃষক নিজেও ভুট্টা চাষ করে যে লাভের মুখ দেখবেন, সে বিষয়েও তারা যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের যাবতীয় পরামর্শ স্বাভাবিক ভাবেই কৃষকদের ভুট্টা চাষে অনেকটাই লাভবান করে তুলবেন বলে কৃষকরা মনে করেছিলেন। আগাম আবাদ কৃত অনেকেই ভুট্টা কেটে ঘরে তুলে লাভের মুখও দেখেছেন কিন্তু বিপাকে পড়েছেন পিছিয়ে পড়া ভুট্টা চাষিরা।
হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ ও মাঝে মধ্যে ঝড়ো হাওয়ায় মাটিতে নুইয়ে পড়েছে ভুট্টা গাছ। ফলে অধিকাংশ ভুট্টা পানিতে ডুবে যায়। একারণে ভুট্টা গাছের ভুট্টা থেকেই নতুন করে ভুট্টার গাছ গজিয়ে উঠেছে। অতিবৃষ্টিতে লেগেছে ছত্রাক। যার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ভুট্টার ন্যায্য মূল্য হতে বঞ্চিত হবেন বলে চিন্তিত রয়েছেন।
গাংনী উপজেলার মাইলমারী গ্রামের শাহ আলম জানান, ভুট্টাতে যেভাবে চারা গজিয়েছে আর পচন ধরেছে। তাতে করে গোখাদ্য হিসেবেও এ ভুট্টা ব্যবহার করা যাবেনা। তিনি বলেন, অশনি এমন ভাবেই এলো যা কৃষকের জন্য অশনি সংকেত!
সরেজমিনে মেহেরপুর জেলার সদর, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলার ময়ামারী, ঝাউবাড়িয়া, দক্ষিণ শালিকা, বুড়িপোতা, হরিরামপুর, রঘুনাথপুর, শোলমারী, আশরাফপুর, শ্যামপুর, হিজুলী, কুলবাড়িয়া, শুভ রাজপুর, ফতেহপুর, তারা নগর, জয়পুর, নূরপুর, মোনাখালী, সাহারবাটী, ভাটপাড়া, নওপাড়া, মাইলমারী, রামকৃষ্ণপুর, লক্ষ্ণীনারায়ণ পুর, করমদী, সহড়াতলা, হাড়াভাঙ্গা, কাজীপুর, হেমায়েতপুর, আড়পাড়া, হোগল বাড়িয়া ও খড়মপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি সাধনের কথা জানান কৃষকরা।
তারা জানান, উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা বীজ ক্রয় করে ভালো ফলনের আশা করলেও তা ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে ভেঙে তচনচ হয়ে গেছে। তারা আরও জানান, বিঘা প্রতি জমিতে ৫৫-৭০ মন ভুট্টার হওয়ার কথা থাকলেও তা অতিবৃষ্টিতে পচন লেগেছে। ১ হাজার টাকা মন বিক্রি হওয়ার আশা থাকলেও এখন ৫শত টাকা মনও বিক্রি হবেনা বলে আশংকা করছেন তারা।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মাঠের পর মাঠ জমির পাকা ও কর্তনকৃত ধান এবং ছোট ছোট পাট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। ধান চাষিরাও তাদের ভেজা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে। অনেক জমির পালা কৃত ধানে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এ ধান থেকে চাল তৈরি করে তা খাবার হিসেবে ব্যবহার করা অসম্ভব বলেও তারা জানান।
ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে ভারী বর্ষণে কৃষকের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা পূরণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।