বৃদ্ধ লালন এর জীবন সংগ্রাম- চা বিক্রি করে ৪ এতিম নাতি-নাতনীকে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন
মেহেরপুর প্রতিনিধি : যে বয়সে ছেলে-মেয়েদের রােজগারে, বৃদ্ধ বয়সে একটু সুখে-শান্তিতে জীবন-যাপন করার কথা। কিন্তু শেষ বয়সে এসে সংগ্রাম করে জীবন কাটাতে হচ্ছে বৃদ্ধ লালন হােসেনকে। বৃদ্ধ লালন মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার ধানখােলা ইউনিয়নের কসবা গ্রামের মৃত আরমান আলীর ছেলে।
জানা গেছে,লালন হােসেনের সংসার জীবনে স্ত্রী ও ৪ সন্তান । ২ মেয়ে ও ১ ছেলের বিয়ে হয়ে সংসার জীবন চলছে। ছােট ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। লালন এর বড় ছেলে ১৬ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন গাংনী উপজেলার নওদাপাড়া গ্রামের মনােয়ারা খাতুনের সাথে। বিয়ের পর তাদের সংসারে জন্ম নেয় ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে। মনােয়ারা ছিলেন ক্যান্সার আক্রান্ত। গত ৭ বছর আগে তিনি মারা যান। মনােয়ারা মারা যাওয়ার কয়েক মাস পর স্বামী রাশিদুল ইসলাম অন্যত্রে বিয়ে করে ৪ সন্তানকে ফেলে অন্যপাড়ায় আলাদা করে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। সন্তানদের আর তিনি খােঁজ নেননা। এদিকে ৪ শিশু সন্তানদের নিয়ে তাদের দাদা লালন ও দাদি সালমা খাতুন চায়ের দােকান দিয়ে কােন রকম জীবন যাপন করছেন।
চার ভাই-বোনের মধ্যে ১৪ বছরের আশিক সবার বড়। আশিক ৫ম শ্রেণী পাশ করে দাদার সাথে চা বিক্রির কাজে সহযােগিতা করছে। মেজাে
মুস্তাকিন ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ছে। সেজাে কুলছুম খাতুন ৫ম শ্রেণী ও সব ছােট রিয়াজ ৩য় শ্রেণী পড়ছে।
দিনমজুর দাদা লালন ও দাদি সালমা খাতুন অতি কষ্টে তাদের লালন-পালন করছেন। দাদার অভাবের সংসারের হাল ধরতে আশিকও চায়ের দোকানদারি করে। চা বিক্রি করে দাদার পাশাপাশি ছোট ভাইবোনের ভরণ-পোষণ ও লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছে সেও । চার ভাই-বোনের কষ্টের কথা জানতে পেরে গাংনী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের আর্থিক সহযোগিতা ও একটি পাঁকা বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে।
বৃদ্ধ লালন বলেন,দরিদ্র সংসারে বাড়ির আঙ্গিনায় চা বিক্রি করে নাতি-নাতনীদের মুখে কােন রকম আহার তুলে দিচ্ছি। পাশাপাশি তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। তারপরও তাদের যে পােশাক দরকার। তা ঠিক মতাে দিতে পারিনি। অভাবের সংসার জীবন বাঁচানােই কষ্টকর। যদি কােন দয়াবান ব্যক্তি আমাদের দিকে একটু সাহায্য -সহযােগিতা করতাে। তাহলে,আমি নাতি-নাতনীদের মানুষ করতে পারতাম?
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান,ইতােমধ্যে পরিবারটিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করা হয়েছে। বর্তমান তাদের চাহিদা বুঝে সহযােগিতা করার চেষ্টা করা হবে।