বিশেষ আবাসন পদ্ধতিতে মুরগী পালন

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  01:13 PM, 02 August 2024

আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী অল্প পুঁজি, অল্প আয়” কৌশলে, সনাতন পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করে থাকেন। এ পদ্ধতিতে মুরগির উৎপাদনচক্রে (একবার ডিম পাড়া থেকে পুনরায় ডিম পাড়ার আগ পর্যন্ত) সময় বেশি লাগা, কম ডিম পাড়া, ডিম না ফোঁটা, বাচ্চা মৃত্যুহার বেশি হওয়ায় দেশি মুরগি পালন অতটা লাভজনক হয়ে ওঠেনি। একটি উৎপাদনচক্র শেষ করতে দেশি মুরগি ১৪০-১৬৫ দিন সময় নেয়। এ সময়ে একটি মা-মুরগি ১৫-১৮টি ডিম এবং বছরে ৪৫-৫০টি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার সময় পুষ্টির ঘাটতি এবং ডিমে তা (ওম) দেওয়ার সময় পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ায় এর মধ্যে বড়জোড় ৩৫-৪০টি বাচ্চা ফোঁটে।

এছাড়া প্রাকৃতিক শিকারী (চিল, কাক, বেজি, বনবিড়াল ইত্যাদি) দ্বারা এবং রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়ায় এর মধ্যে মাত্র ১০-১২টি বাচ্চা ডিম বা মাংস দেওয়ার উপযোগী বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকে। ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার জন্য অনেকক্ষেত্রে এমনটাই ঘটে থাকে।
এ সকল দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে এবং দেশি মুরগি পালন লাভজনক করতে বিশেষ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দারিদ্র বিমোচন সংস্থ্যা মেহেরপুর জেলার সদর উপজেলায় পিকেএসএফ-এর সহযোগিতায় গত ১ বছরে মোট ১২০ জন খামারিকে ৮টি ক্লাস্টারে প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান করেছে।

প্রতিটি খামারে বড় মুরগি রাখার জন্য রাত্রিকালীন ঘর, বাচ্চা মুরগি রাখার জন্য ক্রিপারসহ খাঁচা, ডিম ফুটানোর নেস্ট,বৈদ্যুতিক বাল্ব,স্প্রে জীবাণুনাশক,সাইনবোর্ড ও তথ্য বই সরবরাহ করেছে বিভিন্ন গ্রামের গ্রহিনীদের। সংস্থাটি সঠিকভাবে সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতা, জীব- নিরাপত্তা, ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা,খাবার ব্যবস্থাপনা ও নিয়মিত টিকা প্রদান করার ফলে দেশি মুরগির উৎপাদন অত্র এলাকাতে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্তমানে এই পদ্ধতিতে মুরগি পালন করে ডিম ও মুরগি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে খামারীরা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এই পদ্ধতিতে মা মুরগির রাত্রিকালীন থাকার ঘর, ডিম পাড়া ও ডিমে তা দেওয়ার নেস্ট এবং বাচ্চার মৃত্যুহার কমানোর জন্য বিশেষ ডিজাইনের ক্রিপারসহ খাঁচার ব্যবস্থা করা হয়। মা-মুরগির ডিমে তা দেওয়ার সময় নেস্টের সামনে পর্যাপ্ত খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা, যাতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে মা মুরগি ডিমে তা দিতে পারে এবং ডিম ফোঁটার হার বৃদ্ধি পায়। বাচ্চা ফোঁটার পর মাসহ বাচ্চাগুলোকে তিন প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট ক্রিপারসহ খাঁচায় ২ মাস লালনপালন করতে হয়।

প্রতিটি প্রকোষ্ঠে ১টি খাবার ও পানির পাত্র থাকে এবং সেখানে একটি মা মুরগি তার ১০-১২টি বাচ্চাসহ থাকতে পারে। এতে প্রাকৃতিক শিকারী দ্বারা বাচ্চার মৃত্যুহার রোধ হয়। খাঁচায় থাকায় বাচ্চাগুলো নিবিড় পরিচর্যায় থাকে। সময়মত ২টি রাণীক্ষেত, ২টি গামবোরো রোগের টিকা ও ১টি ফাউল কলেরা রোগের টিকা নিশ্চিত করলে রোগবালাই জনিত মৃত্যুহার রোধ করা সম্ভব হয়।

ফলে ৯০-১০০% বাচ্চা ডিম বা মাংস দেওয়ার উপযোগী সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এছাড়া ক্রিপারসহ খাঁচায় ৬-৭ দিন বাচ্চার সাথে অবস্থান করানোর পর মা মুরগিকে আলাদা করে দেয়া হয় যাকে উইনিং বলে। ফলে মা মুরগি দ্রুত বাচ্চার মায়া ত্যাগ করে এবং অল্প সময়ে আবার ডিম দেয়া শুরু করে। এতে করে একটি মা মুরগি বছরে ৯০-১২০টি ডিম উৎপাদন করতে পারে।

বেসরকারী সংস্থা ডিবিএস এর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো: রুহুল আমিন সরদার  জানান, বর্তমানে দেশি মুরগির তুলনামূলক স্বল্প বিনিয়োগ এবং অল্প জায়গায় লালন-পালন করা সম্ভব। বর্তমান বাজারে দেশি মুরগির দাম অনেক বেশি হওয়াতে খামারি অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ করতে সক্ষম হয়।

পল্লী কর্ম- সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে স্থানীয় দারিদ্র বিমোচন সংস্থার সহযোগিতায় মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৮টি ক্লাস্টারে ১২০ টিরও বেশি বিশেষ আবাসন নিশ্চিত করে আধা -বাণিজ্যিকভাবে দেশি মুরগি পালন খামার গড়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে এই দেশি মুরগি পালন করে অনেকেই তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন করে স্বাবলম্বি হয়েছে। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক জুবায়ের আলম জানান, ডিবিএস সবসময় প্রাণিসম্পদের উৎপাদনশীলতার পাশাপাশি এর গুণাগতমান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই গুণাগতমান ও উৎপাদনশীলতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আপনার মতামত লিখুন :