বগুড়ার আদমদীঘিতে পরিকল্পনাহীন ভাবে নির্মাণ হয়েছে প্রধান মন্ত্রীর দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের ছাতনী উত্তর মাঠে ইরি-বোরো ধান চাষের নিচু জমি মাটি কেটে উঁচু না করেই পরিকল্পনাহীন ভাবে নামমাত্র নির্মাণ করা হয়েছে প্রধান মন্ত্রীর দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি।
ইতিমধ্যেই এই মাঠের জমিতে নির্মিত দুর্যোগ সহনীয় বাড়িতে বসবাস করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিচু জমি হওয়ার কারণে দুই দিনের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। যে কোন সময়ে পানি ঘর গুলোর মেঝেতে ডুকে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে ঘরে থাকা ভুক্তভোগীরা। এছাড়া প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে হাটু পানি জমে এবং ছোট-বড় বন্যার সময় এই মাঠের জমিতে মানুষ সমান পানি জমে যায়। তখন গৃহহীনরা এই সব দুর্যোগসহনীয় বাড়িতে কেমন করে বসবাস করবে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকেই ধারনা করছেন দুর্যোগ সহনীয় বাড়িই প্রতিবছর দুর্যোগ ডেকে আনবে বসবাসরত অসহায়-গৃহহীনদের ভাগ্যে। এছাড়াও পাশের রাস্তা থেকে এই প্রকল্পের বাড়ির উপর দিয়ে খোলা তার মাঠের মধ্যে গভীরনলকুপ চালানোর জন্য কয়েক হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ এর লাইন চলে গেছে। তাই শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে ও বন্যার পানি জমে নয় বিদ্যুৎ এর লাইন থেকেও যে কোন সময় ঘঠতে পারে বড়ধরনের বৈদুতিক দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সান্তাহার-রাণীনগর আঞ্চলিক মহাসড়কের তারাপুরের মোড় নামক স্থানের পশ্চিমে ছাতনী মৌজায় অবস্থিত ছাতনী উত্তর মাঠ। এই মাঠের মধ্যে প্রায় ২৮শতাংশ খাস জমি রয়েছে যা স্থানীয়রা দীর্ঘদিন যাবত ধান চাষের জমি হিসেবে ভোগদখল করতো। ধান চাষের নিচু খাস জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে গৃহহীনদের জন্য ১৪টি দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি। প্রতিটা বাড়ি নির্মাণের জন্য সরকার বরাদ্দ দিয়েছিল ১লাখ ৭১হাজার টাকা ও পরিবহণ বাবদ ৪হাজার টাকা সহ ১লক্ষ ৭৫ টাকা। প্রতিটি বাড়িতে দুইটি ঘর, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও টয়লেট-গোসলখানা রয়েছে।
তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা সোহেল হোসেন বলেন, পরিকল্পনাহীন ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি। গৃহহীনরা যদি ভালভাবে এই বাড়িতে বসবাসই করতে না পারে তাহলে নিচু এই মাঠের জমিতে বাড়ি নির্মাণ করা মানে সরকারের অর্থ পুকুরে ফেলে দেওয়া।
একই গ্রামের রতন সরদার জানান, সরকারের পক্ষ থেকে ভূমিহীন, গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এই সব বাড়িতে মানুষ থাকবে কিভাবে? বর্ষা মৌসুমে এই বারিতে যাবার কোন রাস্তা নেই। বন্যার সময় এই মাঠের পানি জমে। তাহলে এখানে বসবাসরত মানুষরা কিভাবে চলাচল করবে। বন্যার সময় এখানে বসবাসরত মানুষদের সবকিছু নিয়ে রেললাইনের উপর আশ্রয় নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার সেলিম খাঁন জানান, আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও শান্তাহার উপজেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান সহ আরো গণ্যমান্য
ব্যক্তিদের উপস্থিতিতেই ঘর নির্মাণের জন্য এই খাস জায়গা চূড়ান্ত করা হয়েছিল। আমাকে (পিআইসি) প্রকল্প সভাপতি করা হয়েছিল এখানে টিয়ার ৫ মেট্রিক টনের বরাদ্দ শুনছি কিন্তুু আমার কাছে থেকে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার ২ মেট্রিক টনের স্বাক্ষর নিয়েছিল। তবে এখানে কোন দুর্নীতি হয়েছে কিনা আমি জানি না। তবে শুনেছি বরাদ্দ কম থাকায় আপাতত বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে পরবর্তিতে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘরগুলো উচু করে দেওয়া হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন ও আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমিন কে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ করেননি।