পৌর নির্বাচন আয়োজনে ইসিতে তালিকা পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  09:28 AM, 12 October 2020

সারাদেশে পৌরসভা নির্বাচন আয়োজনের প‍্রস্তুতি গ্রহণে আর কোন বাধা নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নির্বাচন করার উপযোগী পৌরর তালিকা পাঠানো হয়। এ তালিকায় ২৮৪টি পৌরসভা রেখেছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। যার মধ্যে ২৮টি পৌরসভায় ভোট হবে আগামী বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এবং বাকি ২৫৬ পৌরসভায় আসন্ন ডিসেম্বরে ভোট হওয়ার সম্ভাব‍্য সময় নির্ধারণ আছে।

তবে শীত মৌসুমে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে নতুন বছরের জানুয়ারিতে যেতে পারে। কিন্তু আগামী ফেব্রুয়ারির আগে এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে আইনি বাধ‍্যবাধকতা রয়েছে ইসির।

মন্ত্রণালয় ও ইসি সূত্র বলছে, বিগত পাঁচবছর আগে একদিনে সারাদেশের মেয়াদোত্তী হওয়া ২৩৪ পৌরসভায় নির্বাচন হলেও সংখ‍্যা বেড়ে ২৫৪টিতে নির্বাচন করতে হবে এবার ইসিকে। তবে এসব নির্বাচন একদিনে না একাধিক দিনে অনুষ্ঠিত হবে সেটা ঠিক করবে কমিশন।

এদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন থেকে বিরত থাকতে ইসি ও মন্ত্রণালয়ে যেসব পৌর মেয়র ও কাউন্সিল দৌড় ঝাঁপ করেছিল পৌরসভা নির্বাচন সম্পন্ন করতে স্হানীয় সরকার বিভাগ থেকে তালিকা পাঠানোয় এ স্তরের জনপ্রতিনিধিদের চেষ্টা বিফলে গিয়েছে।

মন্ত্রণালয় বলছে, জনপ্রতিনিধিদের এ ধরণা চাওয়া অমূলক ও নির্বাচন ব‍্যবস্থার প্রতি অবজ্ঞার শামীল। এ ইস‍্যুতে অভিন্ন মতামত কমিশনেরও।
এর আগে পৌরসভায় নির্বাচন করার উদ্যোগ শুরু হলে বিভিন্ন পৌর মেয়র প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার কাছে ভোট না করার জন‍্য চিঠি দিয়েছেন।

এতে তারা উল্লেখ করেন- সারাবিশ্ব আজ করোনাভাইরাসের ভয়ে কাঁপছে। ঘরে বাইরে লোকজন চলাচল এক প্রকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক প্রতিনিধি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে ঝড়ে পড়েছেন। এ ঝুকির মধ্যেও জনপ্রতিনিধিদেরকে জনগণের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনী কার্যক্রম গ্রহণ করলে কোন প্রার্থী ঘর থেকে বের হতে পারবেন না, আবার ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে আসতে পারবেন না। এজন্য দুর্যোগকালীন সময়ে নির্বাচন আয়োজন না করার জন্য অনুরোধ করছি। সোমবার ইসির চাহিদা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় তালিকা পাঠানোয় তাদের দাবি নাকচ হয়।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা কমিশনকে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন‍্য আজ নির্বাচন করার উপযোগী তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছি। কমিশন এখন পর্যালোচনা করে দেখবেন, কোন পৌরসভাটি আগে করা দরকার কোনটি পরে। তবে, ভোট একদিনে নাকি একাধিক দিনে করা হবে এবং করোনার কারণে ভোট পেছনো হবে কি না, এ সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।

সিনিয়র সচিব আরও বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কথায় ভোট যে পেছানোর সুযোগ নেই, পৌরর তালিকা পাঠানোর মাধ্যমে তার ইতি ঘটেছে বলে আমি মনে করি।

মন্ত্রণালয়ের পৌর শাখার কর্মকর্তা বলেন, আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব পৌরসভায় মেয়াদোত্তীর্ণ হবে পুরো তালিকা পাঠিয়েছি। এ তালিকায় ২৮৪টি পৌরসভা রয়েছে। দফায় দফায় তালিকা পাঠানোর ঝামেলা এড়াতে এটা করা হয়েছে। কমিশন মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাব কষে সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচন করবেন।

ইসি সূত্র জানায়, বর্তমানে নির্বাচনযোগ্য পৌরসভা রয়েছে ৩২৮টি। এরমধ্যে নির্বাচনের উপযোগী রয়েছে ২৫৬টি। তবে এ সংখ্যা কমতে বা বাড়তে পারে। কেননা, মামলাসহ আইনি জটিলতার কারণে বেশকিছু পৌরসভার নির্বাচন আটকে আছে।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করে ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ করা হয়। বেশিরভাগ পৌরসভায় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শপথ নেন মেয়র ও কাউন্সিলররা। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ হিসাবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে বেশিরভাগ পৌরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ২০ অনুযায়ী, পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হবে। এ হিসাব অনুযায়ী যেসব পৌরসভার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে, সেগুলোতে নভেম্বর বা ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটগ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এবার মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ও কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হবে।

সূত্র আরও জানায়, এর আগে একদিনে ২৩৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এবার ২৮৪টির তালিকা পাঠিয়েছে। এখন এগুলোতে একদিনে নাকি ধাপে ধাপে ভোটগ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। তবে করোনা সংকট পরিস্থিতি ও স্কুল খোলা এবং বার্ষিক পরীক্ষার তারিখ বিবেচনা করে পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

ডিসেম্বরে ভোট হলে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তবে ডিসেম্বরে কোনোভাবে ভোটগ্রহণ করা না গেলে আগামী জানুয়ারির মধ্যে এসব পৌরসভায় ভোট করতে চায় কমিশন।

আপনার মতামত লিখুন :