নওগাঁর মনছুর বিলে মক্তব ও এতিমখানা সাইনবোর্ড লাগিয়ে সরকারি জায়গা দখল
জনশূণ্য এলাকা। দুই কিলোমিটারের মাঝে না আছে কোন গ্রাম, না আছে বাড়ি। এমনকি গাছপালাও নেই। চৈত্রের কাঠফাটা তীব্র দাবদাহ। যোগাযোগের ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন।
এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মাঝে খালের পাড়ে বাঁশের বেড়া ও টিনের চালা দিয়ে তৈরী করা হয়েছে এমনই একটি স্থাপনা। নাম দেয়া হয়েছে ‘জ্বান্নাতিন নাঈম মক্তব ও এতিমখানা’। নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের গয়েরপাড়া মনছুর বিলে জলকর গুন্ডি মৌজায় সরকারি জায়গা দখল করে এমনই একটি স্থাপনা করেছেন সরকারি হাসপাতালের সাবেক ফার্মাসিস্ট শফিকুল ইসলাম খাঁন।
তিনি নওগাঁ শহরের কালীতলা মহল্লার বাসীন্দা। জানাগেছে, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বরে বিল মনছুর বিলে বনায়ন এলাকায় খালের পাড়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে তিনটি ছোট ছোট ঘর তৈরী করেছেন শফিকুল ইসলাম খাঁন।
‘জ্বান্নাতিন নাঈম মক্তব ও এতিমখানা’ নামে একটি সাইনবোর্ড টাঙ্গানো হয়েছে। পাশে দুইটি বাছুর সহ দুইটি বকনা বাঁধা আছে। স্থাপনার পাশে কয়েকটি আম গাছের চারাও লাগানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১০ বিঘা জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে।
২০১৮ সালে বরেন্দ্র বহুমূর্খী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে মনছুর বিলের খাল খননের সময় খালের মাটি দিয়ে পাড় বাঁধা হয়। খালের পাড়ে যেখানে এ স্থাপনাটি গড়া হয়েছে সেখানে বছরের প্রায় চারমাস থাকে পানির নিচে।
স্থাপনার পাশাপাশি খালের পানিতে মাছ চাষ এবং পাশেই ধান চাষ করছেন শফিকুল। যেখানে স্থাপনা করা হয়েছে নেই কোন ধরনের নিরাপত্তা। তিনটি ঘরের মধ্যে রাতে একটি ঘরে গরুগুলো রাখা হয়। অন্য একটি ঘরে আছে মাছ ধরার ফাঁদ(খলিসান)। আর একটি ফাঁকা।
সরকারি জায়গা দখল করতে এমন কৌশল নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। খালের পাড়ে গতবছর বন বিভাগ থেকে বনানয়ন করা হয়েছে। গয়েরপাড়া গ্রামের খাদেমুল ইসলাম ও জিয়া রহমান বলেন, আমাদের গ্রামে একটি মাদরাসা আছে। যেখানে হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্রছাত্রী আছে।
আর মাঠের মাঝে খালের উপর যে মক্তকখানা করা হয়েছে সেখানে বছরের কয়েকমাস পানির নিচে থাকে। যোগাযোগের ব্যবস্থাও নাই। কোন বাবা-মা তাদের সন্তানকে লেখাপড়ার জন্য ওই দ্বীপে রাখবে।
জায়গাটি দখল করতে সেখানে মক্তকখানার সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, ওই জমি একজনের দখলে ছিল পরে আমি দখলে নিয়েছি। সরকারি জায়গা সবাই যেভাবে দখল নিয়েছে আমিও সেভাবে দখল করেছি।
জমির কাগজপত্র প্রস্তুত করতে চেষ্টা করা হচ্ছে। সেখানে আবাসিক প্রতিষ্ঠান হবে। কোন ধরনের সমস্যা না হওয়ারই কথা। নওগাঁ সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, মাসকয়েক আগে এখানে যোগদান করেছি।
বনায়ন এলাকা পরিদর্শণে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ‘জ্বান্নাতিন নাঈম মক্তব ও এতিমখানা’ নামে সাইনবোর্ড টাঙানো। এছাড়া সেখানে ধান ও মাছ চাষ এবং গরু পালন করা হচ্ছে।
ওই মালিকের কাছে বিষয়টি জানতে চাইল তিনি জানান সেখানে মাদরাসা হবে। আর গরু বেঁধে রাখার বিষয়ে বলেন বাচ্চারা দুধ খাবে।
নিজের স্বার্থ উদ্ধারের তিনি এসব করেছেন। তাকে তার স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত না। তবে বন কর্মকর্তারে কাছ থেকে জেনে নেওয়া হবে।