নওগাঁর চৌবাড়িয়া হাটে ইজারার টাকা পরিশোধ না করেই অবৈধ ভাবে অতিরিক্ত হারে টোল আদায়ঃ প্রশাসন নিরব
নওগাঁর মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া হাটের ইজারা মূল্যের পুরো টাকা পরিশোধ না করেও ইজারাদার সরকারের বেধে দেওয়া টোল এর চেয়ে অতিরিক্ত হারে টোল আদায়ের অভিযোগ। নীতিমালা অনুযায়ী হাট অনুমোদনের সাত দিনের মধ্যে ইজারার সমুদয় টাকা পরিশোধ করায় করার বিধান থাকলেও রহস্য জনক কারণে ইজারা বাতিল না করে টাকা জমা প্রদানে সময় প্রদান করায় ১ম দরদাতার ইজারা বাতিল করার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ করেছেন দ্বিতীয় দরদাতা ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম। গত ২১ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের কাছে করা ওই অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বাংলা সনের (১৪২৮) জন্য এক বছর মেয়াদি মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া হাট ইজারার ক্ষেত্রে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ছিল দরপত্র জমাদানের শেষ দিন। ওই দিন দরপত্র বাক্স খোলার পর সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হন রাজশাহীর ঠিকাদার আব্দুস সামাদ এবং তিনি এক বছরের জন্য হাট অনুমোদন পান। হাটের ইজারা মূল্য ওঠে ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সরকারি নিয়ম অনুসারে ওই দিন থেকে সাত দিনের মধ্যে ভ্যাটসহ ইজারা মূল্য পরিশোধ করার বিধান থাকলেও রহস্য জনক কারণে এখন পযর্ন্ত ইজারা মূল্য পরিশোধ করা হয়নি। হাটের ইজারা মূল্য অনুমোদন পাওয়ার দুই মাস পার হলেও ওই ইজারাদার সরকারি খাতে ইজারা মূল্য পরিশোধ করেননি। অথচ ইজারাদারের লোকজন গত তিন-চার সপ্তাহ ধরে হাটে গরু ও মহিষের জন্য ৪০০টাকা এবং ছাগলের জন্য ২০০ টাকা খাজনা আদায় করার কথা। কিন্তু স্থানীয় সূত্রগুলোবলছে, হাটে এই নিয়ম মানা হয় না। ইজারাদারেরা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছেন। তাঁরা ক্রেতার কাছ থেকে গরু ও মহিষপ্রতি ৬০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ৫০ টাকা করে নিচ্ছেন। আর ছাগলের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে ৪০০ ও বিক্রেতাকে ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। এছাড়া করোনায় সরকারী নিদের্শনাও অমান্য করা হচ্ছে পশুর ই হাটে।
নওগাঁ জেলার হাটগুলোর মধ্যে চৌবাড়িয়া হাটে পশু বেচাকেনা হয় বেশি। গত শুক্রবার সরেজমিনে হাটে গিয়ে দেখা যায়, চৌবাড়িয়া ইজারাদারের লোকজন গরুর জন্য ক্রেতার কাছ থেকে ৬শ টাকা ও বিক্রেতার নিকট ৫০ টাকা করে মোট ৬শ ৫০ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে। আর ছাগলের জন্য ক্রেতার নিকট ৪শ টাকা নিচ্ছেন। তবে টোল আদায়ের ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা কাউকে টোল আদায়ের পরিমান রসিদে দেওয়া হচ্ছে না।
চৌবাড়িয়া হাটে মান্দা উপজেলার দেলোয়াবাড়ী গ্রামের আরিফ হোসেন বলেন, ‘২২হাজার ৫০শো’ টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছি। এর জন্য ৬০০ টাকা খাজনা দিতে হলো।’ গরুর বিক্রেতা শাফিউল বলেন, ‘আমাকেও এ জন্য ৫০ টাকা খাজনা দিতে হয়েছে।’ ক্রেতা মমিন হোসেন বলেন, ‘ছয় হাজার টাকা দিয়ে একটি খাসি কিনে ৩শ টাকা টোল বা খাজনা দিতে হলো। খাসি বিক্রেতা গফুর হক বলেন, ‘আমার কাছ থেকে খাজনা নিয়েছে ২০ টাকা। গরুর ব্যবসায়ী এমদাদুল বলেন, শুধু পশুর ক্রেতার কাছ থেকে খাজনা নেওয়ার নিয়ম। কিন্তু হাটে ইজারাদারের লোকজন বিক্রেতার কাছ থেকেও টাকা আদায় করছেন। প্রশাসনের নজরদারি নেই এ কারণে এখানে সবাই এসে টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল হালিম এর নিকট বিষয়ে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে বলেন, হাটে কেনা-বেচায় অতিরিক্ত টোল আদায় করার কোনো সুযোগ নেই। যদি হাটের ইজারাদার অতিরিক্ত টোল আদায় করে, তবে প্রমাণসহ কেউ অভিযোগ করলে তখন ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর খাজনার তালিকা টাঙানোর জন্য হাটের ইজারাদার কে বলা হয়েছে।
অভিযোগকারী ঠিকাদার ও নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, হাটের ইজারা মূল্য পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ওই ইজারাদার হাটে টোল আদায় করতে পারবে না। অথচ ওই ইজারাদার গত তিন সপ্তাহ ধরে দিব্যি টোল আদায় করে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে রাজশাহীর ঠিকাদার আব্দুস সামাদ হাট ইজারা পেলেও এখন পর্যন্ত তিনি সাড়ে ৪ কোটি পরিশোধ করেছেন বলে জানতে পেরেছি। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় দরদাতাকে ইজারা দেওয়ার সরকারি নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এখানে তা মানা হয়নি। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ওই ইজারাদার অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন। জেলা প্রশাসকের কাছে করা আবেদনে প্রথম দরদাতা নিয়ম লঙ্ঘন করায় তাঁর ইজারা বাতিল করে ৫ কোটি সাড়ে ৭৩ লাখ টাকার দ্বিতীয় দরদাতা হিসেবে আমাকে ওই ইজারা দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি।
ইজারা মূল্য পরিশোধ না করা প্রসঙ্গে ইজারাদার আব্দস সামাদ জানান, ‘ইজারার মূল্যের অধিকাংশ টাকাই ইতোমধ্যে সরকারি ফান্ডে জমা দিয়েছি। এখন সামান্য যে টাকা বাকি আছে সেটা দ্রুত জমা দেওয়া হবে। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পূর্ন টাকা জমা দিতে না পারায় প্রশাসনের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করেছি। এই সময়ের মধ্যে পুরো টাকা জমা দিয়ে দেব। অনেক ঠিকাদারই নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে সময় আবেদন করে থাকেন। এটা তেমন দোষের কিছু নয়।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ জানান, মান্দার চৌবাড়িয়া হাট নিয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি, লকডাউনসহ নানা কারণ দেখিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে ওই ঠিকাদার টাকা জমাদানের জন্য সময় চেয়েছেন। আশা করি, যে সময় আবেদন করেছেন তার মধ্যেই ওই ঠিকাদার জমা দিতে পারবেন। এরপরেও টাকা জমা দিতে না পারলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।