দোকান না ভেঙ্গে আমাদেরকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিন ! মন গলেনি প্রশাসনের
একদিকে চলছিল বুলডোজার অন্যদিকে কান্নায় বুক চাপড়াচ্ছিলেন কয়েকজন নারী পুরুষ। বুলডোজার যেন তাদের বুকের উপর দিয়েই যাচ্ছে। তাদের আকুতি, দোকান না ভেঙ্গে আমাদেরকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিন। পেট্রল দিয়ে দোকানী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পুড়িয়ে দিতে ম্যাজিস্ট্রেটকে অনুরোধ করেন ভুক্তভোগীরা।
মেহেরপুর কোর্ট মসজিদের দোকান উচ্ছেদ চলছে। এর প্রতিবাদে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করেছে। তাতেও মেলেনি কোন সমাধান। অনড় অবস্থানে থাকা প্রশাসন পুলিশের সহায়তায় দোকানঘুলো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিচ্ছে।
মঙ্গলবার (০৭ জুন) দুপুর পৌন বারটার দিকে সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আবু সাইদের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি টিম কোর্ট মসজিদের সামনের দোকানপাট ভাঙ্গা শুরু করেন। এসময় দোকান মালিক ও তাদের পরিবারের লোকজন অনুরোধ করে সময় প্রার্থনা করেন। কিন্তু জেলা প্রশাসকের নির্দেশের কথা বলে ভাঙ্গা শুরু করেন প্রশাসন। শত অনুরোধে যখন প্রশাসনের মন গলেনি তখন গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন কয়েকজন দোকানী ও তাদের পরিবারের সদস্যারা। এসময় অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে আগুন দেওয়া থেকে নিবৃত্ত করেন। তবে বুলডোজার চলতে থাকায় ব্যবসায়ীরা সড়কে টায়ার জ¦ালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে সেই বিক্ষোভও নিবৃত্ত করে পুলিশ।
জানা গেছে, মেহেরপুর হোটেল বাজার এলাকায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অদূরে কোর্ট জামে মসজিদ। মসজিদের জায়গায় তৈরী করা ১৮টি দোকান মসজিদ কমিটির কাছ থেকে লিজ নিয়ে ব্যবসা করছেন অনেকে। দরিদ্র পরিবারের এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উর্পাজনের একমাত্র পথ হচ্ছে এই দোকানগুলো।
মেহেরপুর হোটেল বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল হান্নান জানান, কোর্ট মসজিদের সভাপতি হিসেবে পদাধিকার বলে দায়িত্বে থাকেন জেলা প্রশাসক। সামসুর রহমান যখন জেলা প্রশাসক ছিলেন তখন মসজিদ কমিটির কাছ থেকে দোকানগুলো লিজ নেওয়া হয়। প্রতি মাসে নির্ধারিত ভাড়া মসজিদ কমিটিতে পরিশোধ করেন দোকানীরা। সামসুর রহমানের পরে আরও তিন জন জেলা প্রশাসকের সময়ে একইভাবে লিজ নবায়ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সম্প্রতি এই দোকানগুলো অবৈধ বলে উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দেন দোকানীদের। দোকানগুলো উচ্ছেদ করলে দরিদ্র ব্যবসায়ীরা পথে বসবে তাই দোকানী ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা জেলা প্রশাসককে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে অনুরোধ করে আসছিলেন।
হোটেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ ইকবাল সিমন বলেন, একটি মাত্র নোটিশ দিয়ে মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়। আজকের এই দিনে ভাঙ্গা হবে এমন কোন সতকর্তা জারি করা হয়নি।
জেলা প্রশাসকের সাথে ব্যবসায়ী সমিতির দেনদরবার চলছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দোকানগুলো বৈধভাবে লিজ নেওয়া হয়েছে। ভাঙ্গতে যদি হয় তাহলে সময় দিলে দোকানিরাই ভেঙ্গে নিতো। এভাবে অন্যায়ভাবে দোকান ভেঙ্গে ব্যবসায়ীদের পথে বসানো হয়েছে। এ কারণে হোটেল বাজারের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে ঘোষণা দেন তিনি।
তবে কেন দোকান ভাঙ্গা হচ্ছে এবং কিভাবে ভাঙ্গা হচ্ছে, আজকে দোকান ভাঙ্গার চুড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কি না এমন সব প্রশ্ন এড়িয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করতে সাংবাদিকদের বলেন উচ্ছেদে নেতৃত্বে দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাইদ।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনছুর আলম খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে এড়িয়ে যান।