থরে থরে সাজানো রয়েছে রসালো তরমুজ। তরমুজের বুক চিরে লাল অংশ দেখানো হচ্ছে ক্রেতাদের। রমজানের শুরুতে যে দর ছিল তা থেকে কমানো হয়েছে অনেকখানি। তবুও মিলছে না কাঙ্খিত তরমুজ ক্রেতা।
শনিবার ও আজ রোব্বার সকালে এ দৃশ্য মেহেরপুরের গাংনীর হাট-বাজারগুলোতে। বলা যেতে পারে- তরমুজের বাজারে ধ্বস নেমে এসেছে।
বাজার অনুসন্ধানে জানা গেছে, রমজানের এক দিন আগে থেকে মেহেরপুরের বাজারে আসে সবুজ রংয়ের তরমুজ। মূলতঃ এই তরমুজের জাত গ্রীষ্মকালেই ফলন দেয়। অন্যান্য বছর এপ্রিলের শেষের দিকে বাজারে এ তরমুজ পাওয়া গেলেও এবার কিছুটা ব্যতিক্রম। রোজায় বেশি দর পাওয়ার জন্য কৃষকরা কিছুটা আগাম আবাদ করেছেন বলে দাবি করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অন্যান্য সময় পিচ হিসেবে তরমুজ বিক্রি হলেও গেল কয়েক বছর রমজান থেকে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়।
রোজার শুরুতে হাট-বাজারে প্রতিটি তরমুজের দর ছিল ২৫০-৮০০ টাকা পর্যন্ত। প্রথম দু’দিন তরমুজ বেচাকেনায় স্বস্তিতে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ক্রেতাদের অভিযোগ ছিল অনেক। অস্বাভাবিক মূল্য, অপরিপক্ক ও অপুষ্ট তরমুজ এবং কেজিতে বিক্রির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচিত ছিল বেশ। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সাড়া পড়ে। কেউ কেউ রমজানে তরমুজ বয়কটের ডাক দেয়।
বয়কটের প্রভাব খোঁজ নিতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যের সত্যতা মিলেছে। আমার জানামতে সচেতন মহলের একটি বড় অংশই বয়কট বর্জন করে এখনও দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন। ফলে বাজারে প্রভাব পড়বেই। আর এটাই স্বাভাবিক। একই খথা জানিয়েছেন গাংনীর ভিটাপাড়ার তরমুজ ক্রেতা আলেয়া বেগম ও মালেকা খাতুন।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, গেল দুদিন হাট-বাজারগুলোতে প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। আবার কেজিতেও দাম কমানো হয়েছে। আগে যেখানে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল এখন তা কমিয়ে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তরমুজ ক্রেতারা জানান, গেল কয়েকদিন ধরে তরমুজের দর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে বেশিরভাগ মানুষ তরমুজ কেনা থেকে বিরত রয়েছেন। তাছাড়া উচ্চমূল্য দিয়ে তরমুজ কেনা সবার পক্ষে তো আর সহজ নয়।
গাংনী বাজারের তরমুজ বিক্রেতা শাহীন মিয়া জানান, তরমুজ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় ক্রেতা শূন্য বলা যেতে পারে। এতে লাভের বদলে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। খুলনা মোকাম থেকে যে দরে তরমুজ কেনা হয়েছে তা থেকে অনেক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কাঁচামাল তাই ধরে রাখলে নষ্ট হবে বিধায় লোকসান দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ী বাবুল জানান, এবার একেবারে বাড়তি দাম। তরমুজের দাম শুনেই ক্রেতারা চলে যাচ্ছেন। ৫০ টাকা কেজির নিচে দাম হলে ভালো হতো। তাহলে ক্রেতারাও কিনে খেত, বিক্রি বাড়ত। তিনি আরো জানান, ভোলা ও বরগুনা জেলায় উৎপাদিত তরমুজ খুলনা মোকাম হয়ে মেহেরপুর জেলায় আসে। মোকামে দর অস্বাভাবিক তাই খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়ছে। মোকামে দর নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে খুচরা পর্যায়ে কমানো সম্ভব না।
জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সজল আহমেদ জানান, দাম বেশি নেয়ায় রমজানের শুরু থেকে তরমুজের বাজার মনিটরিং করা হয়েছে। কয়েকজন তরমুজ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কেজি দরে নয়,পিচ হিসেবে তরমুজ বিক্রির জন্য বলা হচ্ছে। দাম নাগালের বাইরে থাকায় অনেকেই তরমুজ কিনতে চাইছেন না।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ রাব্বী আহমেদ খালিদ
মোবাইলঃ ০১৭১৯-৩৯৩৩৪৪
ই-মেইল: rabbi.meherpur1@gmail.com