তুলশীগঙ্গা নদীর বাঁধ কেটে ব্যক্তিগত পুকুর ভরাট
নওগাঁ সদর উপজেলার তুলশীগঙ্গা নদীর বাঁধের মাটি কেটে ব্যক্তিগত পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। এতে বাঁধের পাড় নিচু হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বেশি হলে ‘ওভার ফ্লু’ হয়ে এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। মাটি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের ইলশাবাড়ি চকপাড়া গ্রামের স্থানীয় এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে নদীর বাঁধের মাটি কেটে পুকুর ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় একাধিক বার প্রতিবাদ জানালেও কোন সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানাগেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার খিদিরপুর, পিরোজপুর ও সুলতানপুর গ্রামের মাঝ দিয়ে তুলশীগঙ্গা নদী বয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সদর উপজেলার ত্রিমোহনীহাট রেগুলেটর থেকে তুলশীগঙ্গা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার নদী চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের দিকে খনন কাজ শেষ হয়। নদী খননের সময় মাটি নদীর দুই পাড়ে রাখা হয়েছিল। যাতে বন্যার পানি রাস্তা ও এলকায় প্রবেশ করতে না পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নজরদারীর অভাবে বেশ কয়েক দিন থেকে যে যার মতো করে মাটিগুলো কেটে সরিয়ে নিচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে অনেক মাটি ব্যবসায়ী রাতের আধারে মাটি ইটভাটায় দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারী খিদিরপুর মুন্সিপাড়া গ্রামবাসীর সঙ্গে মাটি ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। গত ৫/৬দিন থেকে দুইটি স্ক্যাবিটর (ভেকু) ও ১০-১২টি ট্রাক্টর দিয়ে তুলশীগঙ্গা নদীর চন্ডিপুর বোর্ড ব্রিজের পাশে থেকে নদীর পাড়ের মাটি কেটে পুকুর ভরাট করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আব্দুল মতিন নামে এক ব্যক্তি। এনিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানালেও কোন সুরাহা হয়নি।
পিরোজপুর স্থানীয় বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন জানান, নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে এসে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। যাদের কাজ তারা যদি না দেখে আমরা কি করবো। এটা মহা অন্যায় কৃর্তপক্ষের গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। যাদের বিষয়গুলো দেখভালের কথা তারা মনে হয় কিছুই জানে না। বা জেনেও চুপ আছে।
পিরোজপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগামীতে আমাদের জন্য অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে এভাবে নদীর মাটি কাটার কারনে। রাস্তার তুলনায় নদীর বাঁধ নিচু হয়ে গেছে। নদীতে পানি আসলে ওভার ফ্লু হয়ে এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা আছে। আমরা স্থানীয় কয়েকজন বার বার প্রতিবাদ করলেও তারা শুনেনি। প্রভাবশালী হওয়ায় হয়তো মেনেজ করেই এমন অন্যায় কাজ করে যাচ্ছে। যেন দেখার কেউ নাই।
খিদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা সাজেদুর রহমান বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোন অগ্রগতি দেখছিনা। নদীর পারের মাটি এভাবে কেটে নিয়ে গেলে বন্যায় আমাদের বাড়ি ঘরে পানি উঠবে। এতে করে আমাদের বড় সমস্যায় পড়তে হবে। তাছাড়া নদীর পার দিয়ে যাতায়াতও করতে হয়। কেন যে কৃর্তপক্ষ নিরব ।
পুকুর মালিক আব্দুল মতিন বলেন, আমি রানীনগর উপজেলায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে চাকরি করি। নদী খননের সময় আমাদের জায়গার ওপর নদীর মাটি রাখা হয়েছিল। এতে করে আমাদের সব সম্পত্তি নষ্ট করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আমরা আবাদ করতে পারছিনা। গত ৫-৬ দিন থেকে নদীর পাড়ের মাটি সরানোর কাজ করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে যে যার মতো মাটি সরিয়ে নিতে। নদীর পাড়ের মাটিগুলো দিয়ে পাশেই নিজেদের পুকুর ভরাটের কাজ করছি।
মাটিগুলোতো নদীর পাড়ে আর এ মাটিগুলো নদীর বাঁধ রক্ষার জন্য এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাটি ফেলার কারনে আমার কিছু জমি নষ্ট হয়েছিল। বিস্তারিত কথা পারলে আপনারা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেন। এর পর তিনি ফোনটি কেটে দেয়।
মাটি ব্যবসায়ী লিটন হোসেন এর সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, যারা পুকুর ভরাট করছেন তারা আমার বন্ধু হয়। মাটি কাটা ও পরিবহনের জন্য গাড়িগুলো ঠিক করে দিয়েছি। এতে আমার কোন ধরনের লাভ নাই বলে ফোন কেটে দেয়।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাছুদ রানা বলেন, কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে নিচু জায়গা, মসজিদ, মন্দির ও সেবামুলক কাজে ভরাট করা যাবে। তবে ব্যক্তিগত কোন জায়গায় এভাবে কেউ ভরাট করতে পারবেন না। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে অফিসের লোক পাঠিয়েছিলাম। সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, জনকল্যাণমুলক এবং ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক হলে মাটি সরিয়ে নিতে পারবেন। তবে ব্যক্তিগত কাজে নদীর পাড়ের মাটি কেটে ব্যবহার করা যাবে না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।