জ্বর হলেই করোনা পরীক্ষা করাতে হবে- জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী
করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে অসচেতনতার ফলে ঝরে যাচ্ছে অনেক প্রাণ। তাই কারও জ¦র হলেই তাকে করোনা পরীক্ষার আওতায় আনার নির্দেশ দিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মেহেরপুর জেলা করোন প্রতিরোধ কমিটির জুম মিটিংয়ে অংশ নিয়ে তিঁনি জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেন।
জেলার সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন অনুষ্ঠানের সভাপতি মেহেরপুর প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনছুর আলম খান।
বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, মৌসূমি জ্বর মনে করে অনেকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। আবার করোনা ভাইরাস হলে কি হবে না হবে এমন অসচেতনতা থেকেও অনেকে বিষয়টি লুকিয়ে রাখছেন। পরবর্তীতে দেখা যাচ্ছে করোনা এমনভাবে ইফেক্ট করেছে যে তার ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং মৃত্যু বরণ করছেন। তাই গ্রামে গ্রামে ও পাড়ায় পাড়ায় খোঁজ নিয়ে যাদের জ¦র হচ্ছে তাদেরকে অবশ্যই টেস্টের আওতায় আনতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করে প্রচারের নির্দেশ দেন তিঁনি।
লকডাউন বাস্তবায়নে জনপ্রনিধিদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা পরিষদের যাঁরা জনপ্রতিনিধি আছেন তাদেরকে একাজের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। নেতৃস্থানীয় মানুষের সহযোগিতা ছাড়া সরকারি নির্দেশনা বস্তবায়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। স্থানীয় সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ফান্ড দেওয়া হযেছে। সেটা যথাথথভাবে যাদের প্রাপ্য তাদেরকে দিতে হবে। কঠোর লকডাউনের ঘোষণা আসার আগেই ত্রাণ সহযোগিতা প্রদান সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন তিনি।
মানুষকে ঘরে রাখতে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, জেলার সাথে যেমনি অন্য জেলার যোগাযোগ বিভিন্ন করতে হবে। তেমনি ঘর থেকে যাতে কেউ বের হতে না পরে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অযান্ত্রিক অবৈধ যানবাহন (নছিমন, করিম, আলমসাধু ইত্যাদি), পাখিভ্যানসহ সকল যানবহান পুরোপুরি বন্ধের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে মেহেরপুর জেলার করোনা ভাইরাসের এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান তুলে ধরে সিভিল সার্জন বলেন, সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে উদ্বেগজনক হারে। নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আরও ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।
মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা প্রতিপালনে আক্রান্ত হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী বলেন, স্বল্প সংখ্যক পুলিশের পক্ষে সব এলাকায় সব সময় দোকান বন্ধ করতে যাওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধরা এ কাজটি করতে পারেন। বন্ধ করতে গেলে দোকানিরা যদি আইন শৃংখলার অবনতি ঘটান সেখানে পুলিশ গিয়ে জনপ্রতিনিধিদের পাশে দাঁড়াবে। ১ জুলাই থেকে রাস্তাঘাটে চলাফেরা ও যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানের কথা বলেন তিঁনি।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার চিত্র তুলে ধরে তত্ত্বাবধায়ক মোখলেছুর রহমান বলেন, প্রতিমন্ত্রীর সহায়তা আমরা সেন্ট্রাল অক্সিজেন, দুটি আইসিইউ, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে। মোট বেডের সংখ্যা ৫০টি তবে আজ পর্যন্ত রোগী ভর্তি আছেন ৩৯ জন। ক্রমবর্ধমান রোগীর ধক্কল সামলাতে হাসপাতালের দোতলায় আরেকটি ওয়ার্ড স্থাপনের সুপারিশ করেন তিনি।
করোনা আক্রান্ত হয়ে বাসায় আইসোলেশনে আছেন কমিটি সদস্য ও মেহেরপুর জজ আদালতের পিপি পল্লব ভট্টাচার্য। করোনা আক্রান্ত হলে শারীরিক যে সমস্যাগুলো হয় তা তুলে ধরে সভায় তিঁনি বলেন, আমি বাসায় বসে দেখি মানুষ খুব হাসি তামাশার মধ্যে রাস্তাঘাটে চলাচল করছে। সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া কোনভাবেই মানুষকে ঘরে রাখা সম্ভব নয়। প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত একটি করে কঠোর আইন প্রয়োগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
সভায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রসুল, মেহেরপুর পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন ও গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী নিজ নিজ অবস্থান থেকে করোনাকালীন নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।
অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর প্রেস ক্লাব সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল হক মানিক, মেহেরপুর চেম্বার সভাপতি আরিফুল এনাম বকুল, ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দসহ কমিটির সদস্যবৃন্দ।
ভ্যান ও ইজিবাইক চালক, সেলুন কর্মচারী, চায়ের দোকানী, দিনমজুরসহ স্বল্প আয়ের মানুষ যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। দ্রুত তাদের মাঝে ১০ কেজি করে চাউল প্রায় ৭০০ টাকার নিত্যপণ্য ও নগদ ৫০০ টাকা করে প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।