জেল হত্যা ও কিছু কথা

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:27 AM, 03 November 2020

বাংলাদেশে কলঙ্কময় জেলহত্যা দিবস আজ ৩ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের এই দিনে একদল বিপথগামী, উচ্চাভিলাষী,ক্ষমতালোভী, সেনা সদস্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল জাতীয় চার নেতাকে।
ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলা জেলহত্যা মামলা হিসেবে পরিচিত।
ওই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১৫ জনের মধ্যে পাচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও বাকি ১০জন এখনো অধরা। তাদের মধ্যে দুই জন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এবং আটজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরের মধ্যরাতে অশুভ শক্তির চক্রান্তে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারীদের অন্যতম জাতীয় চার নেতাকে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে।

পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর ঘাতকচক্র কারাগারে ঢুকে হত্যা করে এই চার মহান নেতাকে। তার আগে ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে এক অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করেছিল খুনিচক্র। মনে করা হয়, ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায়ই ঘাতকচক্র জেলহত্যার নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছিল।

এই হত্যাকাণ্ড শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। কারাগারের নিরাপত্তানীতি ভেঙে রাতের অন্ধকারে এভাবে জাতীয় নেতাদের হত্যার ঘটনা বিশ্বে বিরল।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর মামলার প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করা হয়।
২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর নিম্ন আদালত থেকে মামলার রায় পাওয়া যায়। রায়ে তিনজনের মৃত্যুদণ্ডসহ ১৫ জনের সাজা হয়। এরপর মামলা যায় হাইকোর্টে, পাওয়া যায় হাইকোর্টের রায়; যদিও সাজাপ্রাপ্তদের বেশির ভাগই পলাতক কিংবা বিদেশে অবস্থান করছে।

পলাতক আসামিদের মধ্যে দুজনের অবস্থান জানা থাকলেও বাকি ৮ জন কোথায় আছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই সরকারের কাছে। জেলহত্যা মামলার পলাতক আসামিদের বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় সরকার তাদের ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে অনেক আগেই। এ জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন পলাতক আসামিদের ধরতে গঠিত টাস্কফোর্স কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেলহত্যা মামলার আসামিরা যেখানেই থাকুক না কেন রায় কার্যকর করতে তাদের খুঁজে নিয়ে আসব।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ দুই মামলার আসামি একই।

এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সম্প্রতি মাজেদ কে দিয়ে ছয় খুনির রায় কার্যকর করা হয়েছে।
এদের মধ্যে জেলহত্যা মামলায় চারজনের দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। তবে এখনো যাদের পাওয়া যায় নি, তাদের ধরে এনে রায় কার্যকর করবই ইনশাআল্লাহ।’

পলাতক ১০ আসামি হলেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধা, দফাদার মারফত আলী শাহ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নুর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী, আহমেদ শরিফুল হোসেন, কিসমত হাসেম ও নাজমুল হোসেন। এদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নুর চৌধুরী কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।
আর মাজেদ কে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় এপ্রিল ২০২০ ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়েছিল জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান রায় দেন। তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় রায়ে। সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেওয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি হলেন রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধা। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১২ জন হলেন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী, আবদুল মাজেদ, আহমদ শরফুল হোসেন, মো. কিসমত হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসার। এদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তাঁদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি।

নিম্ন আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স এবং কারাবন্দি আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধা এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে খালাস দেওয়া হয়। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর লিভ টু আপিল আবেদন করে সরকার। কিন্তু ততদিনে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় চারজনের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় চারজনকে বাদ দিয়ে অন্যদের বিচার শুরু করেন আপিল বিভাগ। ২০১৩ সালে সরকারের আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে ওই বছরের ৩০ এপ্রিল রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে মারফত আলী শাহ ও আবুল হাসেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ডও বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বাকি আসামিদের সাজাও বহাল রাখা হয়।

রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের উদ্যোগে সারা দেশে পালিত হবে শোকাবহ এই দিবস।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আলাদা বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে তাঁরা শহীদ জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
জেল হত্যা মামলার আগামীতে রায় কার্যকর হবে
এই প্রত্যাশায়
♠♠♠♠

মাসুম উল হক (মিন্টু)

সাবেক সভাপতি , বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
গাংনী পৌর শাখা ও
সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
মেহেরপুর জেলা শাখা

আপনার মতামত লিখুন :