জেলা পরিষদ নির্বাচন গাংনীতে কোটি কোটি টাকার খেলা
মেহেরপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে গাংনীতে চেয়ারম্যান পদের ভোট নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। আলোচনায় শুধু সদস্য (মেম্বর) পদের ভোট নিয়ে। ভোটারদের বুকিং দিতে এরই মধ্যে টাকা দেওয়া শুরু করেছেন প্রার্থীদের। নির্বাচন ঘিরে কোটি কোটি টাকার আওয়াজ চলছে এলাকাজুড়ে। বিপুল অর্থ খরচ করে মেম্বর হওয়া দুর্নীতিকে উসকে দেওয়া বলে মন্তব্য সচেতন মহলের।
আগামি ১৭ অক্টোবর মেহেরপুর জেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে চেবয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা আব্দুস সালাম ও সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। জেলা পরিষদের ২নং ওয়ার্ড হচ্ছে গাংনী উপজেলা। এ উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১টি পৌরসভা ও ১টি উপজেলা পরিষদের মোট ভোটারের সংখ্যা ১৩৩ জন। উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান দুই জন, পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরবৃন্দ এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং মেম্বররা জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার।
গাংনী সংরক্ষিত সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা সদস্য পদে সাবেক মেম্বর শাহানা ইসলাম শান্তনা বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় বিজয়ী হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে রাজি করানো এবং কয়েকজন চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করতে শান্তনাকে বিপুল অর্থ গুনতে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। টাকার বিনিময়ে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হয়েছেন এমন গুঞ্জন এখন গাংনীজুড়ে।
এদিকে মেম্বর পদের প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন চার জন। এরা হলেন- সদ্য সাবেক মেম্বর ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিরুল ইসলাম, রাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট ঠিকাদার হাফিজুর রহমান মকলেছ, গাংনী থানা পাড়ার বাসিন্দা ও গাংনী পৌর মেয়রের জামাতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান এবং তেরাইল গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বাদশা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রার্থীরা এখন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। প্রার্থীদের পক্ষ থেকে কোটি কোটি টাকার আওয়াজ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভোটারদের কাছে টাকা পৌঁছুনো শুরু হয়েছে। ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ভোটারদের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাঠানো হচ্ছে।
জানা গেছে, বিগত নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন চেয়ারম্যান স্ব স্ব পরিষদের মেম্বরদের ভোট দেওয়ার জন্য টাকা নিয়ে ম্যানেজ হয়েছিলেন। সেই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে কয়েকজন চেয়ারম্যান তার পুরো পরিষদ ধরেই প্রার্থীদের সাথে টাকার চুক্তি করছেন। আবার কোন কোন প্রার্থীর সরাসরি মেম্বরদের সাথে ব্যক্তিগত চুক্তি করে টাকা পৌঁছেু দিচ্ছেন। এমন গুঞ্জণ এখন সারা উপজেলাতে।
একটি সুত্র জানায়, শুধুমাত্র মেম্বর পদের প্রাথর্ীরা কয়েক কোটি টাকার বাজেট নিয়ে মাঠে নেমেছেন। টাকা ছাড়া কোন ভোটার রাজি হচ্ছেন না। তাই কে কতো টাকা দিতে পারবে সেই মনস্তাত্মিক লড়াইও চলছে প্রার্থীদের মাঝে। ভোটাররাও সেই যুদ্ধের আঁচ টের পেয়ে টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে যাচ্ছেন।
সুত্রটি আরো জানায়, স্থানীয় সরকারের এ শাখাগুলোতে যারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন তারা ভোটের সময় লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বর পদে ভোট করতেই এখন খরচ হয় ৫-১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। অনেকের খরচ তার চেয়েও বেশি। ফলে এসব জনপ্রতিনিধিরা জেলা পরিষদের ভোটের দিকে চেয়ে থাকে। গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে মেহেরপুরের আলোচিত হাবিব চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দীতা করতে গিয়ে বিপুল টাকার অফার দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত হাবিবের মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও টাকা দিয়ে ভোট কেনার প্রবণতা তৈরী হয়েছিল অন্য প্রাথর্ীদের মাঝে। সে ধারাই গত নির্বাচনে টাকা দিয়ে ভোট কিনে অনেক প্রাথর্ী পাশ করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের নির্বাচনেও টাকা দিয়ে ভোট কেনা আগেভাগেই শুরু হয়। অনেক ভোটার বেশ আগে থেকেই প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বুকিং হয়ে আছেন।
টাকা দিয়ে ভোট কিনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া দুর্নীতিকে উসকে দেওয়া কি না ? এমন প্রশ্নের জবাবে কোন উত্তর দেয়নি নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা।
কোটি কোটি টাকার ছড়াছড়ির মধ্যে প্রশ্ন আসতে পারে। আসলে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়সীমা কতো ? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের সর্বোচ্চ ৫ লাখ এবং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর ও মেম্বর পদের প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যয়সীমা আইন ও বিধিমালা দ্বারা নির্দিষ্ট করা আছে। ব্যয়সীমা অতিক্রম করার সাজাও নির্ধারিত আছে। কিন্তু কোন নির্বাচনেই সেই সীমা ঠিক রাখা সম্ভব হয় না প্রার্থীদের পক্ষে। ফলে নির্বাচনে টাকা খরচ করে ভোট কেনার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। যার প্রভাব পড়ছে এসব বিজয়ী প্রার্থীদের দায়িত্ব পালনকালে।