জনগনের সেবার জন্য রাজনীতির মাঠে চিকিৎসক সাগর

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  10:08 PM, 31 March 2023

চিকিসক পেশা ছেড়ে জনগনের দৌর গোড়ায় সেবা পৌছে দিতে রাজনীতির মাঠে নেমেছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক এএসএম নাজমুল হক সাগর। মেহেরপুরের গাংনীর প্রবীণ রাজনীতিবীদ ও শিক্ষানুরাগী নুরুল হকের ছেলে নাজমুল হক সাগর আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ইতোমধ্যে জোরে শোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তুলে ধরছেন সরকারের উন্নয়ন চিত্র। মেহেরপুরে সংসদীয় আসন দুটি। একটি মেহেরপুর-১(সদর ও মুজিবনগর) অন্যটি মেহেরপুর-২(গাংনী)। অবহেলিত এ জনপদে স্বাধিনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দল ক্ষমতায় এসেছে। দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু জনগনের ভাগ্যোন্নয়নে তেমন কোন ভুমিকা রাখেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এলাকার অনেক উন্নয়ন ঘটেছে। কলেজ ও একটি বালিকা বিদ্যালয় জাতীয় করণ করা হয়েছে। রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন ডা এসএম নাজমুল হক সাগর। তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী হলে কি সেবা প্রদান করবেন এবং কোন কোন বিষয়ে উন্নয়ন করবেন তার ফিরিস্তি বর্ণনা করছেন এলাকাবাসীর কাছে।
ইতোমত্যে ব্যাপক সাড়াও পেয়েছেন তিনি।ইতিহাসের বাকে বাকে কিছু মানুষের নাম খোদিত থাকে। কালের পরিক্রমায় কিছু মানুষ আমাদের মাঝে আসে আলোকবর্তিকা হয়ে। যারা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দেন মানুষের তরে মানবতার তরে। মৃত্যুর পরেও এমন মানুষেরা যুগের পর যুগ বেচে থাকে লক্ষ লক্ষ মানুষের মাঝে।আজ এমন একজন মহামানবের কথা লিখতে যাচ্ছি যার নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করা হয়েছে। গাংনী থানা আওয়ামী লীগের ভিত যার হাত দিয়ে রচিত হয়েছে। তাঁর নাম জনাব মোহাম্মদ নুরুল হক( সাবেক এমপি)। তিনি আমাদের কাছে অনুস্মরণীয়। যিনি ছিলেন গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের অবিসংবাদিত নেতা। ১৯১৫ সালের ১ আগস্ট মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মোহাম্মদপুর সবুজ গাছগাছালি ঘেরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা জনাব মুজিব উদ্দিন বিশ্বাস এবং মাতা মোছাঃ জিউজান নেছা।
প্রচণ্ড ও প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন তিনি। ১৯৩১ সালে মেহেরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তারপর উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৩৫ সালে সেখান থেকে তিনি বি.এ পাশ করেন সফলতার সাথে।কর্ম জীবন সম্পর্কে কিছুটা লিখতে চাই। অত্যন্ত সফলতার সাথে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি কোলকাতা ফোর্ট উইলিয়াম ডাক বিভাগে চাকুরি গ্রহণের মাধ্যমে কর্ম জীবন শুরু করেন।
কিন্তু অসীম সাহসিকতা ও যোগ্যতার কারণে ১৯৩৯ সালে চাকরি ছেড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহনের জন্য তিনি ব্রিটিশ ভারতের সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি উক্ত সামরিক বাহিনীর কমিশন্ড অফিসার ছিলেন। উল্লেখ্য যে তিনি ব্রিটিশ ভারতের সামরিক বাহিনীর অর্ডিন্যান্স কোরের দ্বিতীয় বাঙালী কমিশন্ড অফিসার ছিলেন। ভারতের সেন্ট্রাল প্রদেশের কাটনি সেন্টার হতে ৯ মাস দূরুহ অফিসার ট্রেনিং সম্পন্ন করে কমিশন্ড প্রাপ্ত অফিসার পদে যোগদান করে ব্রিটিশ ভারতের নিউ দিল্লি, পুনে, লক্ষ্ণৌ, বোম্বে, জব্বলপুর,লাহোর সহ বিভিন্ন ডিপোতে কাজ করেন।
১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর তিনি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হন। কিন্তু তিনি আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কাজ করেননি। কারণ উল্লেখ করা হয় যে, তিনি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক ছিলেন না অপরদিকে তিনি জন্মস্থানের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে চান। তাই ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসেই পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী থেকে পদত্যাগ  করে ফিরে আসেন নিজ গ্রাম মোহাম্মদপুরে। প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক হন হাজী ভরস উদ্দিন ইনস্টিটিউশন এ। সেখানেই তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে ৩৫ বছর শিক্ষকতার মত মহান পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ধারণ করেছিলেন, “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড “। সেজন্যই নিজ এলাকার মানুষকে সুশিক্ষাই শিক্ষিত করতে,আলোকিত সমাজ গড়তে শিক্ষার গুরুত্ব বেশি দিয়েছিলেন। তাই এমন সোনার চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে একটুও ভাবেন নি। উল্লেখ্য যে, এই স্কুল প্রতিষ্ঠার পর তাঁর সংস্পর্শে এসে অনেক শিক্ষার্থী জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পেশায় নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন।এবার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে লেখার চেষ্টা করবো। দায়বদ্ধতা থেকেই এই ইতিহাস তুলে ধরছি। এগুলো জানা খুব দরকার আমাদের ও আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে। বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগে সংযুক্ত হোন। তখনকার রাজনীতি এত সরল রেখায় ছিলো না,এতটা মসৃণ পথ ছিলো না। তবুও বঙ্গবন্ধুর আহবানে দেশের মানুষের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক কর্মী হয়ে রাজনীতি শুরু করেন।১৯৬৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর গাংনী থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর হাত ধরেই গাংনী থানা আওয়ামী লীগের সফল যাত্রা শুরু হয়। তিনি পায়ে হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে গাংনীর প্রতিটি  গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। আমি সেই সমসাময়িক প্রবীণ নেতা কর্মীদের মুখ থেকে শুনেছি, তিনি কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। কখনো মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি। এমনকি শত্রুদের সাথেও তিনি হাসিমুখেই কথা বলতেন। আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রম,মেধা ও ধৈর্য্য কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন গাংনী থানা আওয়ামী লীগকে।
তখন ১৯৭০ সাল। পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেন। বিপুল ভোটে তিনি বিজয়ী হয়ে ততকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হোন। ১৯৭০-১৯৭২ সাল পর্যন্ত সফলতার সাথে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। উল্লেখ্য যে সামরিক বাহিনীতে ট্রেনিং থাকার সুবাদে তিনি সরাসরি   সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেই সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক হিসেবে বেতাই ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুটমেন্ট করতেন এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতেন। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে সফলতার সাথে রাজনীতি করেন।তিনি ১৯৭২ সালের সংবিধানের অনুমোদনে স্বাক্ষর করেন। এবার যে প্রসঙ্গটি আনতে চাই তা অনেকেরই জানা তবু্ও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। স্বাধীনতার পর মেহেরপুর -২ গাংনী আসনে নৌকার প্রতীক নিয়ে তিনিই প্রথম নৌকার এমপি, আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হন ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে। দীর্ঘ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি মানুষের জন্য কাজ করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে কোথাও কোন দাগ পড়েনি। দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচারের সাথে কখনো আপোষ করেননি। লোভ তাকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। এই গাংনীতে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সবকিছুর বিচার বিবেচনায় সেই সময়ের নেতা কর্মীরা তাঁকে গাংনীর অবিসংবাদিত  নেতা বলে স্বীকার করেন। আমরা গর্ব করে বলতে পারি আমাদের একজন নূরুল হক ছিলেন।  আপনার আলোয় আমরা আজ আলোকিত।ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৫ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর এক কন্যা সেলিনা আক্তার বানু ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত এমপি ছিলেন। ডা.এএসএম নাজমুল হক সাগর ১৯৯৬ এর আগে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো সেই দুঃসময়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি একাধারে উক্ত ইউনিটের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ও আওয়ামী লীগের পক্ষের ডাক্তারদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সদস্য হয়েছেন।
মেহেরপুর সরকারী কলেজ ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি শাহজাহান আলী জানান, সাধারণ জনগনের পাশাপাশি দল ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও চান সাগরের মনোনয়। একজন শিক্ষিত নাগরীক জনগনের পাশে দাড়িয়ে এলাকার জনগনের দাবী পুরুন করুক এমন প্রত্যাশা।
মটমুড়া ইউনিয়ান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম বলেন, গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম নুরুল হক সুযোগ্য সন্তান ডা. এএসএম নাজমুল হক সাগর ভাই করাকালীন সময় থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য সহযোগিতা। তাকে এমপি হিসেবে গান নিয়ে মানুষ দেখতে চাই।

ডা. . এএসএম নাজমুল হক সাগর বলেন,

প্রতিটি ইউনিয়নের গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের সাথে গণসংযোগ মাধ্যমে ২০০৯ সাল থেকে এযাবৎ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার যেসমস্ত গণমুখী উন্নয়ন করেছে তা সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার জনমুখী সরকার। এই সরকারের প্রধান লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ। এই সরকারের আমলে অর্থনৈতিকভাবে দেশ ও দেশের মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা পেয়েছে।মানুষ আগের তুলনায় অনেক নিরাপদ ও শান্তিতে আছে। এই সরকারের সময়ে রাজনৈতিক, কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য। সাধারণ মানুষ ডা. নাজমুল হক সাগর এর ডাকে সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।
ডা. সাগর মনোনয়ন প্রত্যাশি কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,  আমার মূল উদ্দেশ্য হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অভূতপূর্ব উন্নয়ন তুলে ধরা, মানুষের পাশে দাড়ানো, মানুষের জন্য কাজ করা, নৌকাকে আবারো বিজয়ী করা। তবে দল যদি মনে করে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন প্রদান করে তাহলে আমি জনগণের সাথে আরো ভালোভাবে কাজ করার সুযোগ পাবো এবং গাংনীর উন্নয়ন আরো তরান্বিত করার চেষ্টা করবো, জনগণের প্রকৃত ও ন্যায্য অধিকার প্রদানের জন্য সচেষ্ট হবো।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা এই আসনে প্রথম নৌকার এমপি ছিলেন, তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন তাই এই দলের প্রতি এই অঞ্চলের মানুষের প্রতি আমার অনেক দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে রাজনীতি করি।

আপনার মতামত লিখুন :