ছেলেকে বাঁচাতে কিডনি দিতে চান মা
দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে ছেলে পিন্টু’র । তাকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দিতে চান মা টুনু খাতুন । কিন্তু টাকার অভাবে সেই কিডনি প্রতিস্থাপন করা যাচ্ছে না। এলাকাবাসীর সহায়তায় সপ্তাহে তিনদিন পিন্টুর ডায়ালাইসিস চললেও কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ বহন করতে পারছে না তার অতিদরিদ্র পরিবার।
মেহেরপুর সদর উপজেলার রাইপুর খন্দকার পাড়ার মুজাম শেখ ও টুনু খাতুনের ছেলে পিন্টু। গত চার বছর আগে থেমে গেছে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন। কারণ তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রথম দিকে বমির সঙ্গে গলা দিয়ে রক্ত বের হতো পিন্টুর। প্রাথমিক চিকিৎসার পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে জানা যায় পিন্টুর একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে আরেকটি কিডনি নষ্ট হতে শুরু করেছে।
এই খবরে যেন অন্ধকার নেমে আসে পিন্টুর পরিবারে।
পিন্টুই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। ড্রাইভারি করে যা আয় করতেন তা দিয়েই সংসার চলতো। নিজে অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন পরিবার নিয়ে। সেখানে চিকিৎসা করানো অসম্ভব।
তবে পিন্টুর বন্ধু-বান্ধব এবং এলাকাবাসী গত এক মাস ধরে সাধ্যমতো তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া সনো টাওয়ার-২ তে সপ্তাহে তিনদিন ডায়ালাইসিস চলছে পিন্টুর।
পিন্টুর মা টুনু খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ছেলে তাকে বার বার বলে- মা আমি বাঁচতে চাই, আমাকে বাঁচাও। তাই প্রিয় সন্তানকে বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দান করতে চান তিনি। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন করতে যে অর্থের প্রয়োজন তা তাদের কাছে নেই। এজন্য কিডনি দিয়ে ছেলেকে বাঁচাতে চাইলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।
পিন্টু বলেন, অনেক কষ্টের মধ্যে সংসার চলছে। স্বপ্ন ছিল নিজে সংসারের অভাব মোচন করবো। কিন্তু আমিও আজ অসুস্থ হয়ে পড়লাম। বর্তমানে স্ত্রী ও দুটি কন্যা সন্তান নিয়ে কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছি।
বন্ধু-বান্ধব সুন্দর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে। আমারও খুব ইচ্ছে করে আগের মতো সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে। আপনারা সহযোগিতা করলে আমি আবার সুস্থ হয়ে ওঠবো ইনশাআল্লাহ।
স্ত্রী রিক্তা খাতুন বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপন ও চিকিৎসা খরচ প্রায় ১০-১২ লক্ষ টাকার প্রয়োজন বলেছেন ডাক্তার। কিন্তু এতো টাকা যোগাড় করার সামর্থ্য আমাদের নেই। দেশ ও প্রবাসের কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমার স্বামীকে বাঁচাতে সহযোগিতা করতেন তাহলে চির কৃতজ্ঞ থাকতাম।
ঢাকা শ্যামলী সিডেকি এন্ড ইউরোলজী হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার আসিফ (এমবিবিএস) জানান, কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস অস্থায়ী চিকিৎসা। এই মুহূর্তে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করাটা জরুরি। এটাই একমাত্র চিকিৎসা। কিডনি প্রতিস্থাপন হলে পিন্টু সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আর দশজন যুবকের মতো সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চান পিন্টু। সবার সহমর্মিতা আর সহযোগিতায় পারে পিন্টুকে বাঁচিয়ে রাখতে।