চুয়াডাঙ্গায় মসজিদের ইমামের বেতন দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত-১২

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  09:31 AM, 15 March 2022

চুয়াডাঙ্গায় মসজিদের ইমামের বেতন দেওয়া ও টাকা তোলা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১২ জন আহত হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের মাছেরদাইড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় ব্যক্তিরা আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। এসময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করেন। এদিকে, উভয় পক্ষের লোকজন সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত পুলিশ টিম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

আহতরা হলেন- মাছেরদাইড় গ্রামের উত্তরপাড়ার মৃত আব্দুল বাতেনের ছেলে ও মাছেরদাইড় জামে মসজিদের হিসাবরক্ষক আশক আলী ওরফে আশকার (৫৫), তাঁর স্ত্রী রিজিয়া বেগম (৪৫), ছেলে রিপন হোসেন (২১), একই এলাকার মৃত সোলাইমানের ছেলে সিরাজ হোসেন (৫৫), মিজানুর রহমানের দুই ছেলে রাজু হোসেন (৩০) ও সাওন হোসেন (২০), মতিনের স্ত্রী শাহানাজ বেগম (৫০), অনিক (১৭), মাছেরদাইড় মাঝেরপাড়ার আবেদ আলীর ছেলে ইব্রাহিম (৪৫), আলী কদরের ছেলে বাবুল হোসেন (৪০), জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে তোতা মিয়া (৩৪) ও মৃত নুরু ব্যাপারীর ছেলে তাইজেল হক (৫০)। এ ঘটনায় গতকালই চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ উভয় পক্ষের মোট সাতজনকে আটক করেছে।

জানা যায়, গত রোববার মাছেরদাইড় জামে মসজিদে এশার নামাজের পরে মসজিদের ইমামের বেতন দেওয়া নিয়ে মাঝেরপাড়ার ইব্রাহিম ও মসজিদের হিসাবরক্ষক আশক আলী ওরফে আশকার দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে গতকাল বিকেলে ইব্রাহিম তার পক্ষের লোকজন নিয়ে উত্তরপাড়ায় আসে। এসময় ইব্রাহিম ও আশক আলী দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এরই এক পর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে নারীসহ উভয় পক্ষের ১২ জন আহত হন। পরে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় পরিবারের সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। এসময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করেন।

এদিকে, উভয় পক্ষের আহতদের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এলে জরুরি বিভাগের ভেতরে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও উত্তেজন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এসময় সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত পুলিশ টিম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

আহত হিসাবরক্ষক আশক আলী ওরফে আশকার বলেন, ‘মসজিদের ইমামের বেতন ৭ হাজার টাকা। আমি একটি কাজে চুয়াডাঙ্গার বাইরে থাকায় আমার ভাই মারফত আলী ইমামের বেতন পরিশোধ করে দেয়। তবে স্থানীয়দের থেকে ইমামের বেতনের জন্য মাসিক যে টাকা তোলা হয় সেই টাকা তোলার দায়িত্ব দেওয়া ছিল এলাকার আমির হেসেনের ছেলে লালন। যেহেতু আমার ভাই ইমামের বেতন পরিশোধ করেছে সে কারণে লালনকে ওই টাকা আমার ভাইয়ের নিকটে দিতে বলেছিলাম। এরই মধ্যে ইব্রাহিম ওই টাকাগুলো আমার ভাইকে না দেওয়ার জন্য লালনকে নিষেধ করে। আমি নিষেধ করার কারণ জানতে চাইলে বিকেলে ইব্রাহিম জিআই পাইপ ও দাসহ ১০-১৫ জনকে নিয়ে আমার এলাকায় আসে ও আমার ওপর হামলা চালায়। এসময় আমার পরিবারের সদস্যরা ছুটে এলে ওরা তাদেরকেও জখম করে।’

মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আসাদুল মেম্বার বলেন, ‘মাছরদাইড় জামে মসজিদের ইমামের বেতনের টাকা দেওয়া ও টাকা তোলা নিয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি শহিদুল্লাহ ও হিসাবরক্ষক আশক আলীর মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে গত রোববার এশার নামজের পর দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে আজ (গতকাল) বিকেলে দুই পক্ষের লোকজন উত্তরপাড়ায় লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয়পক্ষের ১২ জন আহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘বিকেল পাঁচটার দিকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ১০-১২ জনক জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। তারা একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে আহত হয়েছে বলে জানতে পারি। আহতদের প্রত্যেকেরই মাথা ও হাতসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। জরুরি বিভাগ থেকে তাদেরকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়।’ চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘মসজিদের ইমামের বেতন দেওয়া ও বেতনের টাকা তোলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের একটি ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মোট ১২ জন আহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় সাতজনকে আটক করা হয়েছে। আহতরা সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আপনার মতামত লিখুন :