গার্মেন্টসের ঝুট থেকে তুলা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী গাংনীর যুবক নাজমুল খান বাৎসরিক সকল খরচ বাদ দিয়ে আর লাভ থাকে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টা
গার্মেন্টস থেকে কাপড়ের পরিত্যক্ত টুকরা বা ঝুট কিনে এনে তোলা উৎপাদন করে কপাল খুলেছে মেহেরপুরে গাংনীর নাজমুল খান নামের এক যুবকের। কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে আরও ৩ জনের। সরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতা পেলে বড় আকারে কারখানা খোলার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে বেশিদূর লেখাপড়া করা হয়নি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রামনগর গ্রামের নাজমুল খানের। ফরিদপুর রাজবাড়ি জেলাতে তুলা কারখানায় চাকরি করা অবস্থায় স্বপ্ন দেখতেন, নিজেও একদিন হবেন কারখানার মালিক। ১৬-১৭ বছর চাকরি করে নিজ এলাকায় তৈরি করেন ঝুট থেকে তুলা তৈরীর কারখানা । এলাকায় এসে ৫ লাখ টাকা দিয়ে মেশিন ক্রয় করে, ঢাকা থেকে গার্মেন্টস এর ঝুট কিনে এনে কয়েকজন কর্মচারী নিয়ে শুরু করেন তুলা তৈরির কাজ। প্রথম কয়েক মাস লাভের আশা না দেখলেও পরবর্তীতে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন তিনি। তার উৎপাদিত কারখানা থেকে মাসে ১২ হাজার কেজি তুলা উৎপাদিত হয়। যার বাজার মূল্য আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকা। বাৎসরিক সকল খরচ বাদ দিয়ে আর লাভ থাকে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। তার কারখানার উৎপাদিত তুলা জেলা চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলাতেও বাইরের বেশ কয়েকটি জেলায়। তুলা থেকে তৈরি হচ্ছে লেপ,তোষক, বালিশ সহ তুলা জাতীয় অন্যান্য ব্যবহারের জিনিসপত্র। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা এসে প্রায় প্রতিনিয়তই তুলা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন।
তুলা কারখানার মালিক নাজমুল খান জানান, বর্তমানে একটি তুলা কারখানা থেকে উৎপাদন করে যাচ্ছি। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে বড় পরিসরে তুলা কারখানা তৈরি ইচ্ছা রয়েছে। এই কারখানা থেকে আমি বাৎসরিক সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা আয় করছি। যে স্বাবলম্বী হয়েছি, পরিবারের সদস্যদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি। তাছাড়া অনেকেই আসছেন কারখানা দেখিয়ে পরামর্শ নিতে।
তুলা কারখানার কর্মচারী বজলুর রহমান খান জানান, এর আগে আমি ফরিদপুর জেলায় একটি তোলা কারখানায় কাজ করতাম। যা বেতন পেতাম তাতে অর্ধেকের বেশি বেতন খাওয়া-দাওয়া ও বাড়ি ভাড়াতে শেষ হয়ে যেত। নিজ এলাকায় কাজ করি যা বেতন পায় তা দিয়ে খুব ভালো মতো সংসার চলছে। অপরজন কর্মচারী মালেকা খাতুন জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে হয়েছে আমাকে। ছেলেদের প্রবাসে পাঠিয়েছিলাম সেখানে দালালের খপ্পরে পড়ে দেশে চলে এসেছে। এখন এখানে চাকরি করে সন্তান সংসার নিয়ে ভালো আছি। এখানে চাকরি করে ছোট সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করতে পেরেছি।
গাংনী উপজেলার মমিনপুর গ্রামের শামীম রেজা জানান, বিভিন্ন লোকমুখে শুনে তুলার তৈরীর কারখানা দেখতে এসেছি। এখানে স্বল্প পুঁজিতে অধিক পরিমাণে মুনাফা অর্জন করা যায় শুনেছি। দেখে আমার খুব ভালো লাগছে, আমার মনে ইচ্ছা জেগেছে এমন একটি কারখানা তৈরি করার। কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার নাটনাপাড়া গ্রামের আবু সাঈদ জানান, আমি সদ্য অনার্স শেষ করেছি। চাকরির পিছনে না ঘুরে নাজমুল ভাইয়ের কাছে পরামর্শ নিতে এসেছি কিভাবে একটি তুলা কারখানা তৈরি করা যায়।
মেহেরপুর বিসিকের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফয়সাল হাসনাত জানান, তার যদি বিসিকের নিবন্ধন থাকে, তারা যদি সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে ব্যবসা পরিচালনা করে। তাহলে আমরা সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে।