গাংনী সাব রেজিষ্টার ভবনের সিলিং এ ভাঙ্গন, হুমকির মুখে সেবা দাতা ও গ্রহিতারা
বাংলা পুরাতন সাব জজ আদালত ভবনের স্পেলিং এর কিছু অংশ হঠাৎ ভেঙে পড়েছে। এসময় সিলিং এর নিচে থাকা একটি মোটরসাইকেল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তবে সৌভাগ্যবশত কোন লোকজন না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে। ঘটনায় আতঙ্কিত ওই কার্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এবং সেবা গ্রহীতারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ বিকট শব্দে, সবাই ছুটে গিয়ে সিলিং ঢালাইয়ের একটি খন্ড ভেঙ্গে নিচে পড়ে আছে। সেখানে রাখা একটি মটর সাইকেল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর নিচে কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে ঘটে যেতে পারত নির্মম দুর্ঘটনা।
ঘটনাকালে অদূরে বসেই কাজ করছিলেন নৈশ প্রহরী কাম ঝাড়ুদার মহিবুল ও নকল নবীশ মিজান। প্রত্যক্ষদর্শী মিজান বলেন, “অল্পের জন্য বেচে গেছি। মটর সাইকেলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর নিচে দন্ডায়মান যে কেউ থাকলে নির্ঘাত মারা যেতেন।” উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত ও লোক-সমাগমের দিক থেকে অগ্রগণ্য এই ভবনটি।
এই বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা জানান, “গাংনী পুরো জেলার অর্ধেকটা নিয়ে গঠিত একটি উপজেলা। এই কার্যালয় ভবনটি জন-সমাগম, রাজস্ব আহরণ, কর্মসংস্থান ও গুরুত্বের বিচারে প্রণিধানযোগ্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, গত প্রায় চার দশকে এর যথাযথ সংস্কারে কেউ কাজ করেনি। তাই আজ এই বেহাল দশা। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে যোগদান করেই গণপূর্ত অধিদপ্তরের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয়ের কাছে পত্রযোগে সংস্কারের আহবান জানাই। লকডাউন ও মহামারিতে কাজ শ্লথ হলেও নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব শম্ভু পাল আন্তরিক ছিলেন এবং ৪ লাখ ৭০ হাজার ৩২ টাকার কার্যাদেশ অনুমোদন করেন এবং অল্প সময়ে বেশ কিছু সংস্কার কাজ করে দেন। একই সময়ে উপজেলা পরিষদকেও কিছু সংস্কারের বিষয়ে অবহিত করা হলে ইতিবাচক আশ্বাস পাওয়া যায়। এইটুকুন উদ্যোগ বিগত সময়ে কোন অফিসার নেননি বা স্বপ্রণোদিত হয়ে দায়িত্বশীল কেউ সংস্কারে এগিয়ে আসেননি। যার ফলশ্রুতিতে আজ এই দুর্ঘটনা। ভবনটির ছাদে পচা পাতা ও পানি জমে এই ঘটনাটি ঘটতে পারে। এজলাস ও খাসকামরায় এরূপ ফাটল ও ভেজা দৃশ্য ছিল। গতবছর তা মেরামত করা হয়। খাদ্য গুদামের পেছনে নতুন কার্যালয় ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও এযাবৎ আলোর মুখ দেখেনি। ভবনটি সংস্কারের অযোগ্য হলে গণপূর্ত তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে পারে। আর যদি সংস্কারযোগ্য হয় তবে অবিলম্বে সংস্কার শুরু করাই একান্ত কাম্য।”
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম জানান, বিষয়টি আমি জানিনা। এখন পর্যন্ত আমাকে জানানো হয়নি। যেহেতু এটি একটি জনসমাগম এলাকা সাব-রেজিস্ট্রার আমাকে লিখিত ভাবে অবগত করলে, আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।
উল্লেখ্য, গত শতাব্দীর আশির দশকের প্রথমার্ধে নির্মিত ভবনটিতে নির্মাণোত্তর কোন সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয়নি। ভবনটিতে বর্তমানে স্থাপিত আছে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি ব্যাংক, ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি প্রকল্প ও সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়। প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীর সংখ্যা ও পদচারণাই প্রণিধানযোগ্য। কার্যালয়টিতে বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে মাহফুজ রানা যোগদানের পর বেশ কিছু সংস্কার লক্ষ্য করা যায়। ভবনের সামনে ফুলের বাগান, হাত ধোয়ার বেসিন, পতাকা স্ট্যান্ড, সিঁড়ি, বারান্দা, এজলাস, কক্ষসমূহ টাইলসকরণ; ডিজিটাল সিরিয়াল সিস্টেম ডিসপ্লে স্থাপন, দরজা জানালা মেরামত সহ ভবনের ভেতর ও বাহিরে রঙ করা ইত্যাদি কাজ ভবনটির প্রায় ধ্বংসাবস্থাকে আড়াল করেছে মাত্র।