গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা টিকাদানের স্বেচ্ছাসেবীদের টাকা গায়েব

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  11:30 AM, 29 December 2022

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোভিড ভ্যাকসিনেশনে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য বরাদ্দকৃত দুই লাখ টাকার হিসেব মিলছে না। এ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী টাকা নিলেও তার দায় ইপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুর রশীদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন। যাদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা তাদের মাঝেও বিতরণ করা হয়নি। অপরদিকে বরাদ্দ ও বিতরণের বিষয়টি উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অন্ধকারে রেখেই সব কিছু পার করার চেষ্টা করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
জানা গেছে, করোনা মহামারির সময় ভ্যাকসিনেশনের জন্য স্বেচ্চাসেবক নিয়োগ করা হয়। প্রতিটি দলে তিনজন করে পাঁচটি দলে মোট ১৫জন স্বেচ্চাসেবী কাজ করেন। সেসময় প্রতি জনের জন্য ৩৫০ টাকা করে সম্মানী প্রদানের কথা বলা হয়। এক বছর শ্রম দেয়ার পর গত ৩০ জুন ৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এদের মধ্যে অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবক তাদের সম্মানীর টাকা পেলেও অনেকেই তাদের পাওনা থেকে বি ত হয়েছেন। কার কাছে চাইবেন তাদের পাওনা এ নিয়ে পড়েছেন জীবন বাজি রাখা সেই সকল টিকাদানকারিরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, তারা করোনা মহামারীকে উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষকে ভ্যাকসিন প্রদান করেছেন। অথচ তাদের প্রাপ্য সম্মানীটা আজো বুঝে পাননি। স্বেচ্ছাসেবকদের নামে বরাদ্দকৃত অর্থের দুই লক্ষ টাকা উত্তোলন করে তা পকেটস্থ করেছেন উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব সুপ্রভা রানী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা সুপ্রভা রানীর স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন করা হলেও দুই লাখ টাকার দায় নিচ্ছেন না তিনি। দুই লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন ইপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুল রশিদের ওপর। টাকা হাতিয়ে নেয়ার দোষ ঢাকতে সুপ্রভা রানী ইপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুর রশিদসহ হাসপাতালের অন্যান্য কর্মচারিদের ওপর মানষিক নির্যাতনে মেতে উঠেছেন।
এব্যাপারে ইউপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুর রশিদ জানান, গত ৩০ জুন রাতে হঠাৎ করে স্বেচ্ছাসেবীদের নামের তালিকা চাওয়া হয়। ওই দিন স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা প্রস্তুত করে পরের দিন টাকা উত্তোলন করা হয়। সেই টাকা বিতরণ করার পর অনেক স্বেচ্ছাহেযউ অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের প্রাপ্য ২ লাখ টাকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা নিজের কাছে রাখেন। এর আগে ওই টাকা প্রদানের সময় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে টাকা গ্রহনের রশিদ দিতে বলা হলে তিনি রশিদ প্রদান ছাড়াই মানষিক চাপ প্রয়োগ করে টাকা গ্রহন করেন।
টাকা নেয়ার সময় তিনি অফিসে ডেকে বলেন আমি সদস্য সচিব এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। আপনার কাছে বিতরণ হয়নি এমন ২লাখ টাকা আছে তা আমাকে দিয়ে দিন। নইলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি তখন তাকে টাকা প্রদান করি। সেসময় তিনি বলেন যারা টাকা পায়নি তাদের বলবেন আমার কাছ থেকে টাকা গ্রহন করবে। অথচ সেবসব টাকা আজ অবদি পাওনা দারদের মাঝে বিতরণ করেননি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী। এজন্য স্বেচ্চা সেবকদের টাকা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছেনা।
এব্যপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী জানান, তার কাছে কোন টাকা নাই। ইপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুর রশিদ তাকে কোন টাকা প্রদান করেন নাই।
যেহেতু আপনি করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব আপনার স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে উক্ত টাকার দায় কার? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এবিষয়ে কোন কথা বলবেনা বলে জানান।
এদিকে এতোকিছুর পরেও কোন কিছুই জানানো হয়নি করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি উপজলা নির্বাহী অফিসারকে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুপ্রভা রাণী একাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। সভাপতিতে সব কিছু থেকে অন্ধাকারে রেখে তিনি একাই সব দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মৌসুমী খানম জানান, আমার অফিসে ইপিআই টেকনিশিয়ানকে ডেকে বিস্তারিত জেনেছি। টিকাদানকারীদের মাঝে তাদের পাওয়না টাকা কেনো বিতরণ করা হয়নি সে বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে লিখিত কারন দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে বিষয়টি তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আপনার মতামত লিখুন :