গাংনীর সাবেক ওসি হরেন্দ্র নাথকে প্রধান আসামী করে যুবদল নেতার মামলা
পাঁচ লাখ টাকা চাঁদার দাবী ছিলো মেহেরপুরের গাংনী থানার তৎকালিন ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার, সাবেক এমপি মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকনসহ অন্যান্য আসামিদের। ভিকটিম এসব আসামিদের হাতে ২ লাখ টাকা চাঁদা দিয়েও মুক্তি পাননি। ওসি হরেন্দ্র নাথ সরকার দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ভিকটিমকে শারীরিকভাবে নির্যাতনসহ ক্রস ফায়ারের হুমকি ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৩ টি মিথ্যা মামলা দিয়ে চালান দেন কোর্টে।
ঘটনার পাঁচ বছর পর গাংনী পৌরসভার চৌাগাছা গ্রামের ভিকটিম মনিরুজ্জামান(৪৪) বাদী হয়ে বিজ্ঞ আমলী আদালত, গাংনীর বিচার জাহিদুর রহমানের আদালতে ২১ জনকে আসামি করে ধারা ৩৬৪/৩৮৫/৩৮৬/৩৮৭/১১৪/৫০৬(২০) পিসি একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন, গাংনী থানার তৎকালিন উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হক, এসআই বখতিয়ার, এসআই ইসরাফিল হক এসআই নারদ কুমার, এএসআই শরীফুল ইসলাম, এএসআই রেদওয়ানুল হক, ডিএসবির কনস্টেবল বজলুর রহমান, চৌকিদার মো: শামীম, গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন, গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা আইতাল হক, আব্দুর রশিদ, গাংনী শহরের আব্দুল খালেক, গাংনী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌগাছা গ্রামের মজিরুল ইসলাম মিয়া, নিশিপুর গ্রামের আব্দুল কাদের, বামন্দী বাসস্ট্যান্ড এলাকার রাজনুল হক, শিমুলতলা গ্রামের আকছেদ আলী, কাজিপুর গ্রামের মো:স্বপন আলী, মো: ঝন্টু, ও মটমুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ।
বাদী মনিরুজ্জামানের মামলার এজাহাওে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৪ টার সময় বাদি গাংনী উপজেলা শহরের আব্দুল মালেক ফল ভান্ডারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় আসামি চৌকিদার মো: শামীম আমাকে ডেকে নিয়ে যুবলীগ নেতা মোশাররফ হোসেনের অফিসে যায়। আমি সেখানে পৌছানো মাত্রই ১২ থেকে ২১ নং আসামিরা আমাকে চড় থাপ্পর মারতে থাকেন। এসময় তারা বলেন ৫ লাখ টাকা চেয়েছিলাম। এখনো পরিশোধ করিসনে কেনো। পরে আমার পরিবারের লোকজনকে ৯ নং আসামি ডিএসবি কনেস্টবল বজলুর রহমান আমার বাড়িতে খবর দেন। পরে পরিবারের লোকজন ১ লাখ টাকা নিয়ে মোশাররফ হোসেনের অফিসে আসেন। এসময় তিনি আরও টাকা দাবি করেন। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় থানা পুলিশকে খবর দেন। পরে গাংনী থানার এস আই আব্দুল হকের নেতৃত্বে ৬/৭ জন পুলিশ এসে আমাকে আটক করে থানায় নেন। পরে তৎকালিন ওসি হরেন্দ্র নাথ সরকারের অফিস কক্ষে আমাকে চোখ বেঁধে ও পিচ মোড়া করে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে মারপিট করতে থাকে।
এসময় ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন ৫ লাখ টাকা না দিলে আজ রাতেই তোকে ক্রস ফায়ার দিয়ে হত্যা করবো। এক পর্যায়ে চোখ বেঁধে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে মাঠে নিয়ে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখায়। এক পর্যায়ে অকথ্য নির্যাতনের ফলে রাত আনুমানিক ১ টার দিকে আমার খালার কাছ থেকে ও মায়ের স্বর্ণালংকার বিক্রির দুই লাখ টাকা দিই। তারপরেও আমাকে না ছেড়ে দিয়ে বাকি দুই লাখ টাকা না পেয়ে আমাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের মিথ্যা ঘটনা সাজায়। পরে একটা সার্টারগান ও বিস্ফোরক আইনে অন্য দুটি মিথ্যা মামলা দিয়ে পরের দিন আদালতে প্রেরণ করেন। মামলাগুলো এখন আদালতে বিচারাধীন। এসব মিথ্যা মামলার ফলে আমার শারীরিক ও মানষিক ক্ষতি হয়েছে। এতোদিন পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় মামলা করার সাহষ পাইনি।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান জানান, বিজ্ঞ বিচারক আমাদের আরজি শুনে খুশি হয়ে গাংনী থানা পুলিশকে মামলাটি নথিভ’ক্ত করার আদেশ দিয়েছেন। আমরা আশা করছি আমরা আদালতে ন্যায় বিচার পাবো।