গাংনীতে হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত
মেহেরপুরের গাংনীতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এতে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার খেটে খাওয়া মানুষ। একদিকে শৈত্যপ্রবাহ অন্যদিকে ঘন কুয়াশার ফলে অসুবিধায় পড়েছেন দিনমজুর, যানবাহন চালক ও পথচারীরা। পৌষের শুরুতেও ছিল না শীতের তীব্রতা। মাঝামাঝি সময়ে শীতের তীব্রতা বাড়লেও গত দুদিনে শুরু হয়েছে হাড় কাঁপানো শীত। শীতবস্ত্রের অভাবে কাবু হয়ে পড়ছেন অনেক অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিশু- বৃদ্ধরা। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টাও করছেন তারা। শীতে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে খামারিদের। এ ধরনের শীত আরো কয়েকদিন থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।
গত বৃহষ্পতিবার সকাল খেতে আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশার কারণে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের শেষ নেই। কনকনে শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকেই। তবুও পেটের তাগিদে কাউকে রিকশা, ভ্যান বা ক্ষেত খামারে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে। অনেকই শীত নিবারনের জন্য খড়কুড়া জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছেন।
উপজেলার কামারখালি গ্রামের দিনমজুর মহিবুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন সকালে ইটভাটায় কাজে যেতে হয় যতই কুয়াশা বা শীত পড়ুক না কেন। কারণ কাজ করলে মুখে ভাত উঠবে। ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে, তাদের খরচ জোগাতে হয়।
উপজেলার বাওট গ্রামের নাহারুল ইসলাম জানান, সকাল বেলা শীতের পোশাক খুলতেই দুপুর ১২টা বেজে যাচ্ছে। মাঠের কাজ করব কখন।
অটোচালক সমসের আলী বলেন, প্রচÐ শীতে লোকজন বাইরে বের হচ্ছেন না। যে কারণে ভাড়াও হচ্ছে না। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ২/৩শ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এদিকে অটো চালাতে গিয়ে হাত-পা ঠাণ্ডায় শক্ত হয়ে যাচ্ছে। পাখিভ্যান চালক মহসিন জানান, শীত লাগলেও কিছু করার নেই। পরিবারের লেঅকজনদের দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে হলে কষ্ট করতেই হবে।
দেবীপুর গ্রামের দিনমজুর আদুরি খাতুন জানান, এই কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশায় কাজে যাওয়া যে কি কষ্টকর তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তবে পরিবারের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে পারলে সমস্ত দুঃখ-কষ্ট ভুলে যায়। তবে আজকে খুব বেশি শীত এবং ঘন কুয়াশা পড়েছে। একই কথা জানালেন দিনমজুর রোজিনা খাতুন। তিনি জানান, প্রতি দিন সকালে একটি পাতলা চাদর গায়ে জড়িয়ে কাজে যেতে হয় কারণ একটু ভালো পোশাক পরব অভাবের সংসারে তা আর হয় না। মাথায় চিন্তা থাকে পরিবারের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে হবে। সারা দিন কাজ করে পাই মাত্র ৪০০ টাকা মজুরি। একটু ভালো পোশাক কিনবে সে সামর্থ তাদের নেই। আবার সরকারীভাবে কোন শীতবস্ত্র দেয়া হয় নি।
উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড শীতে জবুথবু হয়ে পড়ছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। আর এই ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলার যত্ন নিতে হবে। আর ধানের চারার যাতে ক্ষতি না হয় সে জন্য চারার মাথার শিশিরগুলো ফেলে দিতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় মেহেরপুরের তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৬ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ। আগামী কয়েকদিন জেলায় শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আব্দুল আল মারুফ জানান, প্রচন্ড শীতে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা কাবু হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালে এখন বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেখা দিয়ে হাছি সর্দি কাশি ও হাপানী রোগ। শীত জনিত রোগ ডাইরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। শিশুদেরকে গরম পোশাক পরিধানের পাশাপাশি ঘরের বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দিলেন এই চিকিৎসক।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, নির্বাচনের কারনে মীতের কম্বল বিতরণ বন্ধ ছিল। এখন সময় এসেছে বিতরণ করার। দয়েক দিনের মধ্যেই শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।