গাংনীতে হলুদ গালিচায় মোড়ানো বিস্তীর্ণ মাঠ
গাংনীর আবহাওয়া অনুকুল হওয়া আর বাজারে চাহিদা ও ন্যয্যমূল্য পাওয়ায় সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছে চাষিরা। প্রতি বছরের বাড়ছে সরিষা চাষ। বিভিন্ন মাঠ যেন হলুদের সম্রাজ্য। কৃষি অফিস বলছে, স্থানীয়ভাবে তেলের ঘাটতি পুরুনের জন্য কৃষি বিভাগ প্রণোদনা ছাড়াও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় দুই হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। গেল বছরে দু’হাজার ৫০৫ হেক্টর সরিষা চাষ করা হয়ে ছিলো। স্থানীয় সরিষা জাতের পাশাপাশি বারি সরিষা ১৪,১৫,১৭,বিনা ৯,৪,১১ ও টোরি ১৭ সরিষা চাষ করেছেন। কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও বাজারে সরিষার চাহিদা থাকায় চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন । অনেকেই দো-ফসলি জমিতে সরিষা আবাদ করছেন। আবার অনেকেই সাথী ফসল হিসেবে ও সরিষা আবাদ করছেন।
জোড়পুকুর গ্রামের আব্দুর রশিদ জানন, তিনি এক বিঘা জমিতে সরিষা বপন করেছেন এবং আরো দুই বিঘা সাথী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করছেন। তিনি আরো জানান, জমিতে ধান থাকতে থাকতে সরিষার বীজ বপন করে দেওয়া হয়। এত খরচ কম হয় লাভ বেশি। তিনি আড়াই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে মাত্র এক হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
বামন্দীর সৈকত আলী জানান, প্রতি বছর আমন ধান কাটার পর জমিতে সরিষা চাষ করি। সরিষা বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায় ওই টাকা দিয়ে আবার ইরি ধানের আবাদ করি। সরিষা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি হয়। এক বিঘা জমিতে ৭-৮ মণ সরিষা হচ্ছে। গেল বছরে সরিষার দাম বেড়েছে। তিনি এবার তিন বিঘা সরিষা চাষ করেছেন। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অধিক মুনাফার জন্য কয়েক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করা হয়। হাড়াভাঙ্গা গ্রামের চাষি আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি এবার এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় নিজেদের প্রয়োজনে সরিষা চাষ করেন।
গাংনীর বেশ কয়েকটি মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন বয়সি লোকজন সরিষার হলুদ ক্ষেতে বেড়াতে আসছেন। অনেকেই আসছেন বন্ধু বান্ধব নিয়ে ছবি তুলতে। কেউ বা বানাচ্ছেন টিকটক ভিডিও। দেখা গেছে মালসাদহ মাঠের মধ্যে স্কুল শিক্ষক ইছারদ্দীনের রচিত ‘মোড়ল ধরা পড়েছে’ গ্রামীণ নাটকের শুটিং। স্থানীয়রাও মনভরে উপভোগ করছেন এসব।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ইমরান হোসেন জানান, গেল বছরে দু’হাজার ৫০৫ হেক্টর সরিষা চাষ করা হয়ে ছিলো আর এবার চাষ হয়েছে দু’হাজার ৯৭৫ হেক্টর । স্থানীয়ভাবে যে পরিমাণ সরিষা চাষ হয়েছে দূর্যোগ না হলে বাম্পার ফলন হবে। আশা করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।