গাংনীতে শিক্ষক ছাত্র মিলে পেটাল অভিভাবককে
মেহেরপুরের গাংনীর জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিলের টাকা চাওয়া কেন্দ্র করে বাক-বিতন্ডার জেরে শিক্ষক ছাত্র মিলিয়ে অভিভাবক কে পেটানোর ঘটনা ঘটেছে। মারধরের শিকার ওই অভিভাবক জোরপুকুরিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে খাব্বাব-বিন-সাইফুল।
খাব্বাব-বিন-সাইফুল জানান, তার বোন হাফসা খাতুন(১৩) ওই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। তার জন্য মিড ডে মিলে চাল ওর টাকা দেওয়ার জন্য শ্রেণী শিক্ষক গোলাম রসূলের কাছে যান। সেখানে টেবিলে হাত রাখায় শিক্ষক ও রাগান্বিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন।এক পর্যায় প্রতিবাদ করেন খাব্বাব-বিন-সাইফুল। শিক্ষক গোলাম রসুলের কথার প্রতিবাদ করায় তাকে গিল ঘষি মারতে শুরু করেন শিক্ষক। শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে আসার সময় সহকারী শিক্ষক আব্দুল হান্নান সিঁড়ি থেকে নিচে নামিয়ে ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়ে উত্তম-মাধ্যম দেন। পরে স্কুল শিক্ষক মিজানুর রহমান মিজান ও ছাত্র আকাশ এবং আরো কয়েকজন মিলে খাব্বাব-বিন-সাইফুলকে তার মায়ের সামনে বেধড়ক পিটিয়া আহত করে। পরে নিজেকে আত্মরক্ষার জন্য পালিয়ে জোরপুকুর বাজারে আশ্রয় নিয়েন।
খাব্বাব-বিন-সাইফুল মা দিলরুবা খাতুন কান্না করে বলেন, আমার চোখের সামনেই কয়েকজন কয়েকজন শিক্ষক বেধড়ক পিটিয়েছে,এমনকি তারাই বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রকেও মারার জন্য লেলিয়ে দেন আমার ছেলেকে। আমি অনেক অনুরোধ করেছি কেউ আমার কথা শোনেননি।
অভিভাবকরা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকলেও শিক্ষকরা এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিদ্যালয়ের অঘোষিত ছাত্রবাসে থাকতে বাধ্য করেন। যে কোন সময় ছাত্রিদের শ্লিলতাহানীসহ নানা অপকর্মের ঘটনা ঘটতে পারে। শিক্ষার্থীরা একরকম জিম্মি হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় তারা কেউ মুখ খুলে না। ছাত্রাবাসে না থাকলে নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং সমাপনী পরিক্ষায় সমস্যার সৃষ্টি হবে বলে ভীতি প্রদর্শন করা হয় বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন ছাত্র। তবে তারা তাদের নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।
সাবেক মেম্বর সাহাব উদ্দিন বলেন, এই বিদ্যালয়টি নীলকরদের মতো আচরণ করে। সব কিছুতেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মতামত গ্রহণ করা হয় না। তাদের আচরণও নীলকরদের মতো। কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। প্রতিবাদ করলেই মারধরসহ নানা ধরণের অত্যাচার চালানো হয়।
এদিকে প্রধান হাসান-আল-নূরানী শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ে এসে খাব্বাব-বিন-সাইফুল শিক্ষককে আগেই মারধর করায় কয়েকজন শিক্ষক তাকে ধাক্কা দেয়। ছাত্ররাও ফুঁসে উঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ওই অভিভাবককে বাড়িতে পাঠানো হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ছাত্রদের ভাল ফলাফলের জন্যই ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাউকে জোর পূর্বক রাখা হয়নি। কোন অঘটন ঘটারও সম্ভাবনা নেই।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাশার জানান, এভাবে কোন বাচ্চাকে কোন শিক্ষক গায়ে হাত তুলতে পারেন না। আগামীকাল প্রধান শিক্ষককে ডাকা হয়েছে। যদি কোন শিক্ষক ছাত্রর গায়ে এমনভাবে হাত তুলে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ(তদন্ত) মনোজিৎ কুমার নন্দী জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। ভুক্তভোগীর পরিবার লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।