গাংনীতে যত্রতত্র বিক্রি শিশু খাদ্য, নেই প্রশাসনিক নজরদারি
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন মুদি দোকানসহ ভ্রাম্যমাণ দোকানে অবাধে শিশু খাদ্য বিক্রি হলেও প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছেনা।
ব্যবসায়ীদের(বিক্রেতাদের) শারীরিক ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করা হলেও তদারকি নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। শিশু খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন মাঠে না নামলে শিশু স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে বলে মন্তব্য শিশু বিশেষজ্ঞদের। শিশু খাদ্য বিক্রি, উৎপাদন ও বাজারজাত করার সরকারি আইন থাকলেও তা প্রয়োগ নেই বলে অভিযোগ শিশু অভিভাবকদের।
মুদি দোকানে সাজানো প্লাস্টিকের কৌটায় বিস্কুট, আইসক্রিম, আইসবার, সরবত ও বেকারি ফুড বিক্রি করা হলেও কৌটার গায়ে নেই উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানের নাম, উৎপাদন তারিখ এবং মেয়াদ । বিভিন্ন রং, বিভিন্ন স্বাদে আকৃষ্ট হয়ে এসব খাদ্য খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
জানা গেছে, গাংনী উপজেলার বিভিন্ন শহর এবং গ্রামে হাজারো শিশু খাদ্য বিক্রির দোকান রয়েছে। এদের মধ্যে ৬ শতাধিক দোকানের তালিকা রয়েছে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের কাছে। এদের মধ্যে ৩ শত বিক্রেতাকে প্রিমিসেস ফিটনেস, মেডিকেল ফিটনেস প্রত্যয়ন প্রদান করেছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস। তাতে শুধু মাত্র বিক্রেতার কোনো প্রকার ছোঁয়াচে বা কুষ্ঠ রোগ আছে কি না তা উল্লেখ রয়েছে। তাও আবার একই ব্যক্তি এই প্রত্যয়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তাদের সতর্কতামূলক কোনো প্রশিক্ষণ বা নিয়মও বেধে দেয়া হয়নি।
ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে দেদারছে বিক্রি করছে শিশু খাদ্য। শিশু খাদ্য বিক্রির বিষয়ে বিধি নিষেধ সম্পর্কে নূন্যতম ধারনা নেই ব্যবসায়ীদের।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ভ্রাম্যমাণ কিছু গাড়ি এসে দোকানে দোকানে শিশু খাদ্য সাপ্লাই দিয়ে যায় । আকর্ষনীয় রং আর স্বাদের হওয়ায় শিশুরা ঝুকছে সেসকল খাদ্যের দিকে।
গাংনী নবীণপুর গ্রামের সেন্টু জানান, তার ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে বাড়িতে ভাত না খেয়ে দোকান থেকে ঝাল মুড়ি আর নিম্ন মানের চানাচুর খেয়ে স্কুলে আসে। শারীরিক দূর্বলতার কারণে সে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কয়েকদিন আগেও অসুস্থ হলে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় তাকে।
ভাটপাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, দোকানের বিস্কুট আর পানীয় পান করে ক্ষুধামন্দায় ভুগছে তার মেয়ে হাফিজা।
চৌগাছার আনোয়ার হোসেন জানান, সকালে উঠেই ছেলে মেয়ে বায়না ধরে মুদি দোকানের বিস্কুট আর আইসবার খাওয়ার জন্য, না দিলে ছেলে মেয়ে কান্নাকাটি করে। বাড়ির খাবারের প্রতি তাদের অনীহা।
মাইলমারি গ্রামের মুদি ব্যাবসায়ী রনি জানান, প্রতিবেশী দোকান গুলোতে শিশুদের আকৃষ্ট করার মত অনেক খাবার রয়েছে। আমার দোকানে না থাকায় বেচাকেনা কম হতো। প্রতিবেশী দোকানদারের দেখাদেখি আমাকেও এখন শিশুদের খাবার রাখতে হয়।
গাংনীর মালশাদাহের বসুন্ধরা কফি হাউজ, ইট এন্ড ইনজয়, বাঁশবাড়িয়ার লিখন কফি হাউজকে ফিটনেস সার্টিফিকেট নেবার কথা বললেও তারা নেইনি বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গাংনী উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মশিউর রহমান জানান, মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলে ব্যবসায়ীরা সতর্ক হবে। আমাদের জনবলের অভাবে তা হয়ে ওঠেনা।
গাংনীতে নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকের অফিসে একজন অফিস সহায়ক পদ থাকলেও ১১ বছর ধরে তা শূণ্য রয়েছে। সব কাজ আমাকেই সামলাতে হয়। ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেল্থ (আই,পি,এই) এর অনুমোদন ব্যতীত শিশু খাদ্য বাজারজাত করা নিষেধ থাকা সত্বেও যেখানে সেখানে শিশু খাদ্য বিক্রি ও বাজারজাত করা হচ্ছে এ বিষয়ে প্রশাসন কেন তৎপর নয় এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সাদিয়া সুলতানা বলেন, নিম্ন মানের খাবার খেয়ে শিশুদের কিডনি এবং মেধা বিকাশ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। খাবারে অরুচি শিশুদের বেড়ে ওঠাতে বাধাগ্রস্থ করবে, শিশুরা ভুগবে অপুষ্টিজনিত নানা রোগে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রিয়াজুল আলম বলেন, শিশু খাদ্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে দায়িত্ব দেয়া আছে। তিনি উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে যারা অবৈধ ব্যাবসায়ী রয়েছে বা নিম্ন মানের খাদ্যসামগ্রীর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরএম সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, শিশু খাদ্য বিক্রি’র যে যথাযথ আইন আছে তা অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই। ভ্রাম্যমাণ অনেক দোকানে শিশু খাদ্য বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে।