গাংনীতে ফ্রী ফায়ার-পাবজি গেমের কারণর জীবন দিতে হলো আবির হোসেনকে(ভিডিওসহ),

গাংনীর চোখগাংনীর চোখ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  06:08 PM, 30 June 2021

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষােলটাকা ইউনিয়নের মিনাপাড়া গ্রামে শিশু আবির হোসেন (১২) হত্যার ঘটনার জট খুলেছে। মোবাইলফোনের পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেয়া ও ফ্রি ফায়ার খেলাকে কেন্দ্র করে আবিরকে হত্যার শিকার হতে হয়েছে বলে গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন।

https://youtu.be/et4UEUbHfw4

বুধবার দুপুরের দিকে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিংয়ে গাংনী থানার ওসি এ তথ্য জানান। ওসি বজলুর রহমান জানান চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার শরিষাডাঙ্গা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসি আসাদুল হকের ছেলে আবির হোসেন (১২) তার মায়ের সাথে নানার বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের মিনাপাড়া গ্রামে ১০ বছর যাবত বসবাস করে আসছিল। গত ২৬ জুন বিকেলে শিশু আবির তার নানার গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পর এদিন (শনিবার) দিবাগত রাত ১২টার দিকে একটি পাটক্ষেত থেকে আবিরের হাত বাধা লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মিনাপাড়া গ্রামের মিরাজুল ইসলামের ছেলে মোস্তফা আল মুজাহিদ ও একই গ্রামের বাসিন্দা ও ষােলটাকা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুহু নবীর ছেলে জুনাইদ ইসলাম ওরফে হামিমকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়। মামলা নং-২৩,তারিখ-২৭/০৬/২১ ইং। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার জট খুলতে শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদে মুজাহিদ জানায় আবির আমার মোবাইলফোন মাঝে মাঝে ব্যবহার করতো। এমনকি ফ্রি ফায়ার খেলতাে। এবং মোবাইলফোনের পাসওয়ার্ড কৌশলে নিজের আয়ত্বে নেয়। আবির মোবাইলফোনের পাসওয়ার্ড গোপনে ব্যবহার করে আমার মোবাইলফোনের মোটা অংকের টাকা উত্তোলন করে। আমি পাসওয়ার্ড উদ্ধারের জন্য তাকে অনুরোধ করলেও সে দিতে চাইনা। বরং পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে। এ ক্ষোভ থেকে তাকে মিনাপাড়া গ্রামের মাঠে নিয়ে বন্ধু হামিমকে সাথে করে আবিরকে হত্যা করি।

এদিকে আবিরকে হত্যা শেষে আবিরের নিজস্ব মােবাইলফােনটি মুজাহিদের হেফাজতে নেয়। এসময় মুজাহিদ ওই মােবাইলফােন দিয়ে আবিরের বাবা মালয়েশিয়া প্রবাসি আসাদুলের কাছে মুক্তিপণের দাবি করে। আসাদুল তার শিশু পুত্র আবিরকে মুক্ত করতে টাকা দিতেও রাজি হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই আবির মারা গেছে। এবং হত্যাকারীরা টাকা নেয়ার বিষয়ে পরে আগ্রহ দেখায়নি। এদিকে মুজাহিদ ও হামিমকে শিশু সদনাগারে রাখা হয়েছে।

শিশু আবির হত্যার কয়েক ঘণ্টা পর গাংনী থানা পুলিশের তৎপরতায় হত্যাকারীদের সনাক্ত ও আটক করার ফলে এলাকাবাসি মধ্য একটি আস্থা তৈরী হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি শিশু আবির হত্যাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্য বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তাহলে,অপরাধীরা মাথা চাড়া দিতে পারবেনা।

ফ্রী ফায়ার-পাবজি গেম সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ৫ম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্র আবির হোসেন(১২)কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন মেহেরপুরের গাংনী থানার ওসি মোঃ বজলুর রহমান। বুধবার দুপুর ২টার দিকে কার কার্যালয় হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত ব্রিফিং এ তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, জাহিদ(১৫), হামিম(১৪) ও আবির পরস্পর তিনজন আত্মীয় হওয়ার কারণে একসাথে খেলাধুলা করত। মোবাইল ফোনে সাধারণ গেম খেলতে খেলতে এক পর্যায়ে তারা ফ্রী ফায়ার-পাবজি গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে। কয়েক সপ্তাহ পূর্বে মুজাহিদের কাছ থেকে আবির কেন ফ্রী ফায়ার-পাবজি গেমের একাউন্ট পাসওয়ার্ড নিয়ে পরিবর্তন করে ফেলে। সেই একাউন্টে মুজাহিদের ৫০হাজার টাকা রয়েছে বলে দাবি করে আবির হোসেনের কাছে, ফ্রী-ফায়ার-পাবজি গেমের একাউন্ট অথবা ফেরত চাই মুজাহিদ। আবির হোসেন টাকা ও ফ্রি ফায়ার-পাবজি গেম এর ফেরত না দিতে চাওয়ায় বিরোধের শুরু।

তিনি আরো বলেন, ঘটনার ঐদিন উপজেলার ষোলটার ইউনিয়নের সদস্য নূহ নবীর ছেলে হামিকে সাথে নিয়ে মিরাজ উদ্দিনের ছেলে মুজাহিদ হামিম কে ডেকে এনে মারধর করে। হামিমের বেল্ট খুলে মুজাহিদ গলায় চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আবির হোসেনকে।

পরে পাটের আঁশ দিয়ে বেঁধে ফেলে রাখার পর আবির হোসেনের কাছে থাকা তার মায়ের মোবাইল ফোন থেকে আবির হোসেনের বাবাকে ফোন দিয়ে হিন্দি ভাষায় ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে মুজাহিদ। আবির হোসেনের বাবা বিষয়টি তাঁর মা-ও আত্মীয়-স্বজনকে জানান। পরে আবিরের স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে সন্ধান তার পাশাপাশি ৯৯৯ ফোন দেন। ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুজাহিদ ও হামিম জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি স্বীকার করে, মরদেহের সন্ধান দিলে উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরো বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিশু আবির হোসেন এর মা বাদী হয়ে হামিম ও মুজাহিদের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় মামলা দায়ের করেন।মামলা নং-২৩,তাং-২৭/০৬/২১ইং। মামলার আসামিরা মেহেরপুর আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। নির্দেশে আসামিদের বয়স ১৪ ও ১৫গ বছর হাওয়ার কারণে যশোর কিছু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।

মিকুশী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক জানান,মুজাহিদ ৮ম ও হামিম ৬ষ্ঠ শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র।করোনা সংক্রমনের জন্য স্কুল বন্ধ থাকার কারণে কিছু শিক্ষার্থী ফ্রী ফায়ার-পাবজি গেম সহ নানা অপরাধে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

এদিকে একমাত্র শিশুসন্তান আবির হোসেন কে হারিয়ে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার বাবা-মা। আবির হোসেনের সহপাঠীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

উল্লেখ্যঃগত শনিবার(২৬জুন) দিবাগত মধ্যরাতে মিনাপাড়া-মানিকদিয়ার মাঠে পাটক্ষেত থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আবির হোসেন স্থানীয় মিনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরিষাডাঙ্গা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আসাদুল ইসলামের ছেলে। আবির হোসেনের বাবা প্রবাসে থাকার কারণে তার নানার বাড়ি উপজেলার মিনাপাড়া গ্রামে মা সহ বসবাস করতেন।

https://youtu.be/et4UEUbHfw4

আপনার মতামত লিখুন :