গাংনীতে টাকার দাবীতে মৌমিতার অনশন নিয়ে নানা প্রশ্ন । মানহানী মামলা করলেন পৌর মেয়র
মেহেরপুরের গাংনীতে উপজেলা পরিষদ চত্বরের শহীদ মিনারে শিশিরপাড়া গ্রামের মৌমিতা খাতুন পলি গত ৪ দিন ধরে অনশন করছেন। গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলামের কাছে চাকুরির জন্য দেওয়া ১৫ লাখ টাকা পাবেন বলে দাবি করেছেন। তবে এর স্বপক্ষে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকার ব্যাংক রশিদের ফটোকপি ছাড়া কিছুই দেখাতে পারেননি। অন্য কারো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তিনি অনশন করছেন না প্রকৃতপক্ষে টাকা পাবেন তা নিয়ে চলছে বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জন। এদিকে অনশনে ভ্রুক্ষেপ না করেই ৫কোটি টাকার মানহানী মামলা করলেন পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম।
গত ২০ আগস্ট শহীদ মিনারে একই দাবিতে অনশন করেছিলেন মৌমিতা। চাকরীর জন্য দেওয়া টাকা পাবে এমন অভিযোগে মেয়র আশরাফুল ইসলামের দাবি ছিল তার স্বামী মোমিনুল ইসলাম জমি কেনার জন্য তাকে টাকা দিয়েছেন। দাবীকৃত টাকা তিনি আবার তাকে ফেরত নিয়েছেন। অনশনের পর রাতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান ও গাংনী থানার ওসির মধ্যস্থতায় তিনি অনশন ভঙ্গ করেছিলেন। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ খালেকের উপস্থিতিতে থানায় বসে উভয় পক্ষ। সেখানেও উঠে আসে মৌমিতার স্বামীর টাকা ফেরত নেওয়ার বিষয়। তবে তার স্বামী সেখানে উপস্থিত না থাকায় আলোচনা স্থগিত করে পরবর্তীতে স্বামীর উপস্থিতিতে বিষয়টি নিরসন করার সিদ্ধান্ত হয়।
জানা গেছে, কয়েকদিন পরে মৌমিতা স্বামীকে নিয়ে আবারও থানায় উপস্থিত হয়েছিলেন বিষয়টি নিরসনের জন্য। তবে মেয়র আশরাফুল ইসলাম ব্যাক্তিগত কাজের অজুহাতে বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। সেখান তার স্বামী মোমিনুল ইসলামের কাছে সাংবাদিকরা মেয়রের দাবির বিষয়টি জানতে চান। কিন্তু তাকে সাংবাদিকদের সাথে তার কথা বলতে দেওয়া হয় না। স্বামীর নাম ও ঠিকানাও বলতে বাধা দেন মৌমিতা ও তার স্বামী। এতে মৌমিতার স্বামীর সাথে মেয়রের লেনদেন নিয়ে আবারও সন্দেহ ঘনিভূত হয়। ওইদিন কোন সমঝোতা বৈঠক ছাড়াই মৌমিতা বাড়ি ফিরে যান। পরবর্তীতে গত সোমবার দুপুর থেকে আবারও অনশন শুরু করেন মৌমিতা।
এদিকে প্রথম অনশনের দিন মৌমিতার পাশে রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তার পাশে ছিলেন। এবারের অনশনে তার পাশে কাউকে তেমন দেখা যাচ্ছে না। কোন ব্যক্তি বা গোষ্টির স্বার্থ হাসিলের জন্য মৌমিতা অনশন করছেন বলে তাই নানা প্রশ্ন অনেকের মুখে। শক্ত কোন প্রমাণপত্র না থাকা এবং মৌমিতার স্বামীর অনুপস্থিতি এ সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরণ অনশনে বসলেও তিনি এখনও সুস্থ আছেন। মাঝে মাঝেই মৌমিতা ও তার মা অনশন এলাকা ছেড়ে হারিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে মৌমিতার দাবি পৌরসভায় সহকারি কর আদায়কারি পদে চাকুরির জন্য মেয়রকে তিনি ১৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। মেয়র কারাগারে থাকাকালে দাবীকৃত ১৫ লাখ টাকার মধ্যে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন মেয়রের স্ত্রীর নামীয় ব্যাংক একাউন্টে। দীর্ঘদিন বিষয়টি অতিবাহিত হলেও চাকুরি এবং টাকা ফেরত কোনটাই তিনি পাচ্ছে না। টাকা আদায়ের জন্য তিনি তাই অনশন করছেন।
অভিযোগ ও মানহানী মামলার বিষয়ে পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, একটি পক্ষ আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করতে মৌমিতা পলিকে অনশনে বসিয়েছেন। বিষয়টি যখন পরিস্কার হয়েছে তখন মৌমিতার কাছে আর কেউ যাচ্ছে না। মৌমিতা অনশন করে আমার যে সম্মানহানি করেছেন তার বিরুদ্ধে আমিা আইনগত ব্যবস্থায় মেহেরপুর চীপ জুডিশিয়াল আমলী আদালতে ৫ কোটি টাকার মানহানী মামলা করেছি।