গাংনীতে ছয় প্রতিবন্ধী নিয়ে অন্ধ গৃহবধূর মানবেতর জীবন যুদ্ধ
চোখের আলো না থাকলেও অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে বলিয়ান হয়ে জিবন যুদ্ধে নেমেছেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গৃহবধু পারেছা খাতুন। নিজে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও হাল ছাড়েননি সংসারের। মানসিক ভারসাম্যহীণ ননদ, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বামী ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে তার জিবন সংগ্রাম।
অভাব অনটন কুরে কুরে খেলেও আজো তার কপালে জোটেনি সরকারী কোন সহযোগিতা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা স্বাবলম্বীদের খোঁজ খবর রাখলেও এ প্রতিবন্ধী পরিবারের কোন খোঁজ রাখেন না তারা।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শাহিনের স্ত্রী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পারেছা খাতুন। স্বামী, মানসিক ভারসাম্যহীণ ননদ বৃদ্ধ অন্ধ মা রঙ্গিলা আর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই সন্তানকে নিয়ে তার পাচ জনের সংসার। স্ত্রী পারেছার চোখের আলো না থাকলেও মনের আলোয় পথ চলা শুরু করে সে।
স্বামী শাহিনকে কামলার কাজে পাঠিয়ে আবার সাথে করে নিয়ে আসে সে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় শাহিনের মজুরি দেয়া হয় অর্ধেক। এই সামান্য টাকা দিয়ে সংসার চালানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হওয়ায় শুরু করে ছাগল ও হাঁস মুরগি পালন। অল্প দিনেই কিছুটা স্বস্তি আসে সংসারে।
বছর খানেক পরে অনেক আশা নিয়ে সন্তান গর্ভে ধারণ করলেও বিধি বাম। পরপর দুটি সন্তান হয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। শুরু হয় তাদের অভিশপ্ত জিবন সংগ্রাম। তবুও হাল ছাড়েনি পারিছা। ভিক্ষাবৃত্তি না করে পরিশ্রম করে খেয়ে না খেয়ে সংসার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন। নিজের হাতে সংসারের সব কাজ করতে হয় তাকে।
রান্না বান্না, সন্তানদের গোসল করানো খাওয়ানো ছাড়াও সংসারের সব কাজই করেন নিপুণ হাতে। স্বামী স্ত্রী দুজনই বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় তাদের মাথা গোজার ঠাঁইও ছিল না। স্থানীয় ও প্রবাসী কয়েকজন যুবক কোন রকম থাকার ঘরটি ঠিক করে দিয়েছে। আগামীতে দৃষ্টিহীণ এই দুই সন্তানের কী হবে এটা ভেবে কুল পান না পারেছা। তবুও এগিয়ে যাবার স্বপ্ন তার।
সংসারের হালধরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পারেছা জানায়,পরিবারের সকলকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করলেও সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগীতার ছিটে ফোটাও পাইনি। জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান মেম্বাররাও খোঁজ নেইনি এপর্যন্ত। সরকারি সহযোগীতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
প্রতিবেশি কোহিনুর বেগম জানান, পারেছা নিজে অন্ধ হয়ে গোটা সংসারটি যেভাবে টিকিয়ে রেখেছে তা একজন স্বচ্ছল মেয়ের পক্ষে সম্ভব না। অনেকের সংসারে ছোটখাটো মতবিরোধ থাকলেও পারেছার সংসারে অভাব থাকলেও আছে গভীর ভালবাসা।
আরএক প্রতিবেশি শাহিন আলম জানান, করোনা ভাইসারে দুযোর্গকালীণ মুহুর্তেও তাদেরকে কেউ সহযোগীতা করেনি। সরকারি সহযোগীতার অনেক গল্প শুনলেও এমন একটি অসহায় পরিবারের দিকে ফিরে তাকাইনি ইউপি মেম্বর কিংবা চেয়ারম্যান।
এলাকাবাসীর সহযোগীতায় এপর্যন্ত তারা টিকে আছে। তবে তাদের মত একটি পরিবারকে দুর্যোগ সহনীয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর দেবার দাবি এ প্রতিবেশির।
উদ্যোগী যুবক সোহেল রানা বাবু করোনাকালীণ সময়ে গরীবদের সহযোগিতা করার সময় এই পরিবারটি চোখে পড়ে। সেসময় এদের ঘরটি ঠিকঠাক করে কোনরকম বসবাসের উপযোগি করা হয়। স্থানীয় লোকজন যারা প্রবাসে কর্মরত তাদের কাজ থেকে সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। এ পরিবারটির স্থায়ী একটা সমাধান প্রয়োজন বলে জানালেন এই উদ্যোগী যুবক।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব তার চেষ্টা করা হয়েছে। আগামীতে পরিবারটির জন্য চেষ্টা করা হবে।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার তৌফিকুর রহমান জানান, অফিস থেকে ইতোমধ্যে খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে। পরিবারের লোকজনকে অফিসে আসতে বলা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তালিকা দেয়া হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরএম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, তিনি পরিবারটি সম্পর্কে জানতেন না। সরকারীভাবে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।