গাংনীতে ক্রীড়া শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, ভয়ে স্কুল ছাড়া অনেক শিক্ষার্থী
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাওট সোলেমানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়েরর ক্রীড়া শিক্ষক মিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে সপ্তম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে যৌন নিপিড়নের অভিযোগ উঠেছে। লোকো লজ্জার ভয়ে স্কুল আসা বন্ধ করে দিয়েছে ওই ছাত্রী। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কমেছে অনেকাংশে। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছে ক্রীড়া শিক্ষক মিরাজুল ইসলাম। এদিকে প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে গোপনে সমঝোতার চেষ্টা ও ঘটনাটি আড়াল করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, নিয়োগের কিছুদিন পর থেকেই শিক্ষক মিরাজুল ইসলাম বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের নানা ধরনের নানা অঙ্গভঙ্গিসহ কুরচিপূর্ণ কথা বলে আসছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে সপ্তম শ্রেনীর ঐ শিক্ষার্থীকে নানাভাবে যৌন হয়রানী করে আসছিলো। দিন পাঁচেক আগে শিক্ষক মিরাজুল ওই ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে কু প্রস্তাব দেয়। লোক লজ্জার ভয়ে ছাত্রী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানিয়ে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেয় ও পরিবারের লোকজনকে জানায়। সেই সাথে জানানো হয় বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গকে।
এলাকার কয়েকজন জানান, প্রতিটি ছাত্রীই একজন শিক্ষকের মেয়ে তুল্য। কীভাবে তাকে কুপ্রস্তাব দেয়? তার বিচার হওয়া প্রয়োজন। এজন্য ছাতিয়ান ও বাওট গ্রামের লোকজন ফুঁসে উঠেছে। রবিবার ও সোমবার এলাকার লোকজন বিদ্যালয়ের আশে পাশে অবস্থান নেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে শিক্ষক আত্মগোপন করেন। শিক্ষক মিরাজুল দুশ্চরিত্রের মানুষ। তাকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও জানান তারা।
এলাকাবাসি আরও জানান, ওই শিক্ষককে বাঁচাতে ও ঘটনা আড়াল করতে প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন মিথ্যাচার করেন। ঘটনাটি আদৌ সত্য নয় বলে প্রচার করতে চাইলে ওই শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের লোকজন পুরো ঘটনাটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে জানান। এর পরই প্রধান শিক্ষক দমে যান। এছাড়াও ঘটনার ৫দিন অতিবাহিত হলেও প্রধান শিক্ষক ওই ক্রিড়া শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেন নি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেন নি।
কয়েকজন শিক্ষক জানান, ২০১৮ সালে এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগ পান শিক্ষক মিরাজুল। তখন থেকেই তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ রয়েছে। এমতাবস্থায় প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ কারো কথায় কান না দিয়ে তাকে যোগদান করান। বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই ছাত্রীদের সাথে অসদাচরণ এবং বাজে ইঙ্গিত করতেন। হাসির ছলে কথা বলায় তখন কেউ কিছু মনে করতেন না। কিন্তু উত্যক্ত করা ছাড়াও ছাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করায় সকলেই বিরক্ত।
অভিভাবকরা বলছেন, সন্তান যখন বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদ্যালয়ে যায় তখন সবচেয়ে বেশি নিরাপদে থাকে। আর এই নিরাপদ জায়গায় যদি সন্তানরা যৌন হয়রানির শিকার হয় তাহলে কার ভরসায় আমরা তাদেরকে বিদ্যালয় পাঠাবো। যতদিন এই শিক্ষক বহিষ্কার না হবে ততদিন বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠাবে না বলেও জানিয়েছেন তারা।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ঘটনার পর থেকে অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ে না আসার জন্য চাপাচাপি করছেন। যদি শিক্ষক ও ওই ছাত্রী অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে দুজনকেই আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন জানান, অসুস্থতার কারণে কয়েক দিন ছুটিতে ছিলাম। লকো মুখে ওর বিদ্যালয় শিক্ষক শিক্ষার্থীর মুখে জানতে পায় মিরাজুল ইসলাম এমন অপকর্ম ঘটিয়েছে। তিনি আরো বলেন গত বুধবার আমাকে ফোন দিয়ে বলেন আমি হার্টে অসুস্থতায় ভুগছি সুস্থ হলে স্কুলে ফিরব, এরপর থেকে তার সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সেই সাথে ওই শিক্ষার্থীকে ঘটনার বিবরন দিয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাহাবুল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনার পরের দিন ঘটনাটি শুনেছেন। প্রধান শিক্ষক তাকে ঘটনাটি জানান নি। লোকমুখে ঘটনাটি শুনে বিদ্যালয়ে আসেন এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলেন।
গাংনী থানার ওসি(তনন্ত) মনোজিৎ কুমার নন্দী জানান, এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থ নেওয়া হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্যঃ গত ২৮ এপ্রিল মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা থানাপারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুল আলম কাজলের বিরুদ্ধে এক পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থী শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। ওই শিক্ষার্থীর বাবা গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করলেও জোরপূর্বক লিখিত অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য করে শিক্ষক সমিতি ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।