গাংনীতে কোল্ড ইনজুরিতে বীজতলা নষ্টের শঙ্কা
শৈত্য প্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলায় কোল্ড ইনজুরিসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। বীজতলায় পানি জমা রাখা ও পলিথিন ব্যবহারেও কিছু কিছু বীজতলার চারা লালচে ও হলুদ রং ধারন করেছে। তবে কৃষি অফিস বলছেন, কুয়াশা আর শৈত্য প্রবাহ কেটে গেলে চারা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। কিছু বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন কৃষি অফিস।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বোরো মৌসূমে আবাদের পরিমান বেড়েছে। গেল মৌসূমে বোরো আবাদ অর্জিত হয়েছিল ৮ হাজার ২৫২ হেক্টর। চলতি মৌসূমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৩৮০ হেক্টর। সে অনুযায়ি চাষিরা ৪০৭ হেক্টর বীজতলা তৈরী করেন। চাষিদেরকে উন্নতমানের আবাদের লক্ষে উফসী জাতের ধানবীজ চার হাজার জন চাষিকে ও সাত হাজার ২০০ হাইব্রীড জাতের ধান চাষিকে প্রণোদনা দেয়া হয়। বিভিন্ন মাঠে মাঠ দিবস ছাড়াও চাষিদেরকে নানা ভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি ব্লকে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে চলেছেন।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের হিসেব মতে, গত এক সপ্তাহে মেহেরপুর অঞ্চলে তাপমাত্রা ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া সন্ধ্যার পরে বাতাস বইলেও রাত থেকে ভোর পর্যন্ত কুয়াশা পড়েছে। উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বোরোর বীজতলায় কোথাও হলুদ, কোথাও লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। কুয়াশা থেকে বীজতলা রক্ষায় চাষিরা পানিবদ্ধ করে রাখছেন। আবার কোন কোন বীজতলায় পলিথিন দিয়ে চারা ঢেকে রেখেছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ি চাষিরা কাজ করলেও বীজতলা রক্ষা করা যেন কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত বীজতলা সেরে উঠবে।
রাইপুর গ্রামের চাষি মকলেছুর রহমান গাংনীর চোখ’কে জানান, সপ্তাহ খানেক আগেও বোরো ধানের বীজতলা সবুজ ছিল। কয়েকদিনের তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে ধানের চারার পাতা মরে যাচ্ছে। ধানের চারা মারা যাওয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে। প্রচণ্ড ঠান্ডা আর কুয়াশার জন্যই এমন হচ্ছে। ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকলে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাবে।
যুগির গোফা গ্রামের ধান চাষি আবু বকর গাংনীর চোখ’কে জানান, কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি। নেই রোদের তাপ। সন্ধ্যার পরে থেকে বইছে হিমেল হাওয়া। আর গভীর রাত থেকে পড়ছে কুয়াশা। প্রতিদিন সকালে বোরো ধানের বীজতলায় দড়ি টেনে কুয়াশাগুলো ফেলে দেয়া হচ্ছে। পলিথিন দিয়েও বীজতলা ঢেকে দিচ্ছেন চাষিরা। তার পরেও হলুদ হয়ে গেছে ধানের চারা। এমন অবস্থা আরও কয়েকদিন থাকলে ধানের চারার পাতা মরে যাবে।
গাংনী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আব্দুর রউফ গাংনীর চোখ’কে জানান, এখনও শীতের কুয়াশার কারণে সেই ভাবে বোরো ধানের বীজ তলা নষ্ট হয়নি। সেইভাবে ক্ষতি হয়নি। পলিথিন ব্যবহারের ফলে বীজতলা গরম হয়ে থাকে এবং কুয়াশা পলিথিন ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না, যার ফলে কোল্ড ইনজুরি থেকে বীজ তলা রক্ষা পায়। এজন্য কৃষকদের পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে যে কৃষকদের বীজতলার জমিতে পানি জমে আছে সেগুলো নিষ্কাশন করতে হবে। তার পরও কোন সমস্যা হলে ছত্রাক নাশক ব্যবহার করতে হবে। আরও কয়েকদিন এমন অবহাওয়া থাকলে বোঝা যাবে আসলে কুয়াশার কারণে কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে।