কুষ্টিয়ায় ধর্ষণের পর ভিডিও করে চাঁদা দাবি চাঁদার টাকা নিতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক ধর্ষক
১০মার্চ (বুধবার) কুষ্টিয়ায় এক গৃহবধূকে দুই জন মিলে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ করে একটি চক্র। পরবর্তীতে ওই ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করতে থাকে ধর্ষকরা। একপর্যায়ে ওই গৃহবধূ নিজের আত্মসম্মান বাঁচাতে টাকা দিতে রাজি হয়। টাকা দিতে রাজি হলেও টাকা দেওয়ার জন্য সময় চেয়ে নেন ধর্ষিতা ওই গৃহবধূ। মান-সম্মানের ভয়ে প্রশাসনের কাছে প্রথমে যেতে রাজি না হলেও এক পর্যায়ে সকল ভয় ভীতি কে পিছনে ফেলে অন্যায়ের সাজা দেওয়ার জন্য ছুটে যান কুষ্টিয়া মডেল থানায়। ১১মার্চ বিকাল আনুমানিক চার ঘটিকার সময় ধর্ষিত ওই গৃহবধূ কুষ্টিয়া মডেল থানায় গিয়ে মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শওকত কবিরকে সকল বিষয় খুলে বলেন।
বিষয়টি শোনার পরও তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নিতে উদ্যত হন কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ। হঠাৎ গৃহবধূ ধর্ষকদের ফোন পেয়ে টাকা দিতে চাইলে, ধর্ষকরা টাকা দেবার জন্য গৃহবধূকে কুষ্টিয়া নতুন শিশু পার্কের পিছনে আসতে বলে। তখনই কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ এদেরকে ধরার জন্য একটি ছক তৈরি করে। রিক্সা চালক ও সাধারণ মানুষ সেজে পুলিশের একটি দল শিশুপার্কের চারিপাশে অবস্থান নেয়। চাঁদার টাকা আনতে গিয়ে পুলিশের জালে আটক হয় দুই ধর্ষক ও তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী। আটকের পর স্থানীয় কাউন্সিলর ও তার সহযোগীরা আসামীদেরকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য হট্টগোল তৈরি করে এবং পুলিশের হাত থেকে আসামীদের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শওকত কবির ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সকল অপচেষ্টা রোধ করে আসামীদেরকে থানায় নিয়ে আসতে সক্ষম হন।
গৃহবধূ জানান, গতকাল বুধবার বিকেলে কুষ্টিয়া শহরের সনো হাসপাতালের গলিতে একটি কোচিং সেন্টারের গৃহবধূ তার বড় ছেলেকে নিয়ে যায়। সেই সময় তার সাথে ৪ বছরের ছোট শিশুটিও ছিল।
তিনি আরও জানান, কোচিং সেন্টারের আরেক ছাত্রের মা তাকে তার এক বোনের বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে আমি সরল বিশ্বাসে তার সাথে যায়। তখন তিনি আমাকে কুষ্টিয়া এন.এস. রোডের একতারা মোড়ের একটি বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় প্রবেশের পরই ঐ ভাবির মোবাইলে একটি কল আসে। কল আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমাকে ঐ রুমে বসতে বলে রুম থেকে বের হয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমাকে যেই রুমে বসতে দেওয়া হয়েছিল সেই রুমের সাথে আরেকটি রুম আছে। ঐ দুটি রুমে যাতায়াতের জন্য আরেকটি দরজা ছিল। হটাৎ দেখি ঐ দরজা দিয়ে দুইটি ছেলে আমার রুমে প্রবেশ করে। বিপদ জেনে রুম থেকে বেরোনোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়। তখন তারা আমাকে মারধর করে এবং আমার ছোট ছেলেকে জিম্মি করে তারা দুই জন মিলে আমাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় তারা ভিডিও ধারণ করে এবং আমাকে বলে ৫০ হাজার টাকা দিবি না হলে ভিডিও তোর স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ভাইরাল করে দেবো। উপায় না পেয়ে আমি হাত-পা ধরলে তারা ২০ হাজার টাকা দিলে কাউকে জানাবে না এবং ভাইরাল করবে না বলে জানান।
গৃহবধূ আরো বলেন, মান-সম্মানের ভয়ে প্রশাসনের কাছে প্রথমে যেতে রাজি না হলেও এক পর্যায়ে সকল ভয় ভীতিকে পিছনে ফেলে অন্যায়ের সাজা দেওয়ার জন্য ছুটে যায় কুষ্টিয়া মডেল থানায়। সেখানে অফিসার্স ইনচার্জ মহোদয়কে সবকিছু খুলে বললে তিনি, এসআই সাহেব আলী ও এএসআই আসাদের নেতৃত্বে সাদা পোশাকে একটি টিম কেউ রিক্সা চালক সেজে আসামিদের ধরতে পাঠায় এবং সেই টিমের দক্ষতায় তারা আসামীদের ধরতে সমর্থ হয়।
ওই দুই ধর্ষক ও চাঁদাবাজ হলেন কুষ্টিয়া শহরের নারিকেল তলা এলাকার আঃ করিমের ছেলে রবিউল ইসলাম সোহাগ (২৪), আড়ুয়াপাড়া এলাকার শফিউল ইসলামের ছেলে শাকিল আহমেদ (২২)।
এবিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শওকত কবিরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একটি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। আমরা ধর্ষকদের গ্রেফতার করেছি। তাদের খুব শীঘ্রই কোর্টে চালান দেওয়া হবে।