কুষ্টিয়ায় সন্ত্রাসী রাশিদুল গং কর্তৃক অস্ত্র ঠেকিয়ে অপহরণ: অতঃপর মুক্তিপণ আদায়
সাংস্কৃতিক রাজধানী নামে খ্যাত কুষ্টিয়া জেলা এক সময় চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের অভায়ারণ্য হিসাবে দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিত ছিল। ২০০০ সালের আগে থেকেই জন্ম নিয়েছিল একাধিক চরমপন্থী সংগঠন। তারপর থেকে প্রতিনিয়ত কুষ্টিয়া জেলায় ঘটতে থাকে টেন্ডারবাজি চাঁদাবাজি অপহরণ গুম সহ নানাবিধ অবৈধ কর্মকাণ্ড, মেতে উঠেছিল রক্তের হোলিখেলায়, শহরের অলিতে গলিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে মাথা কাটা লাশ। সরকারি দপ্তরের সামনে কাটা মাথা সহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন দেহ বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গেছে। ২০০৮ সাল থেকে সকল চরমপন্থী সংগঠন গুলো আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কুষ্টিয়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বাঘা বাঘা সন্ত্রাসীরা বন্দুকযুদ্ধে মারা গেলেও থেকে যায় কিছু ছিঁচকে চরমপন্থী। তখন তারা জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়।
বর্তমানে পালিয়ে থাকা কুষ্টিয়া সদর উপজেলা রাজাপুর গ্রামের রাশিদুল ইসলাম, আশরাফুল, আইনাল ও কাথুলিয়া গ্রামের বিল্লাল সহ একাধিক সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে তৈরি করেছে চরমপন্থী সংগঠন। বর্তমানে রাশিদুল এর নেতৃত্বে এই সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে। অন্যদিকে রাশিদুল দলীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে সেলফি বাজ নেতা বলে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
পাশাপাশি রাত নেমে আসলেই শুরু করে তাদের তান্ডব লীলা। তারই সূত্র ধরে রাশিদুল আয়নাল আশরাফুল, বিল্লাল সহ সাতজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী গত ১৭ তারিখ রাত আনুমানিক ৮ ঘটিকা সময় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের শরীফ নামের এক গরু ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় খয়েরপুর গ্রামের মাঠে। উক্ত মাঠে নিয়ে গিয়ে তাকে পিঠমোড়া করে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করে বুকে দুইটা পিস্তল ঠেকিয়ে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরবর্তীতে প্রানের ভয়ে গরু ব্যবসায়ী শরীফ তাদের মুক্তিপণের টাকা দিয়ে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসেন।
উল্লেখ্য ভুক্তভোগী শরিফের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, তার অরজিনাল বাড়ি কুমিল্লার চাঁদপুরে। গত দুই বছর আগে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সোনাইডাঙ্গা গ্রামে একটি জায়গা ভাড়া নিয়ে প্রথমে শুরু করেছিলাম গরুর খামারের ব্যবসা। উক্ত গরুর খামারের ব্যবসায় লাভবান না হতে পেরে অবশেষে রাজাপুর গ্রামে একটি জমি ক্রয় করে সেখানে গত ৩ মাস আগে বড় আকারে একটি গরুর খামার তৈরি করি, কিন্তু এখনও বাড়ি করতে পারি নাই। খামার তৈরি করার শুরুতেই তারা আমার কাছ থেকে ঐ সন্ত্রাসী রাশিদুল বাহিনী প্রায়ই ২০,৩০,৪০ হাজার টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশেষে তারা গত ১৭ তারিখে আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে।
বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে গত ১৮ তারিখ সন্ধ্যায় শরিফের গরুর খামারের পাশে এলাকাবাসীদের নিয়ে মিটিং বসে উক্ত মিটিংয়ে আশরাফুল ও রাশিদুল উপস্থিত হলেও বাকিরা কেউ উপস্থিত হয় নাই। তবে এ বিষয়ে শরিফ ভয়ে প্রথমে মুখ খুলতে রাজি হননি পরবর্তীতে তিনি প্রতিবেদক এর কাছে সম্পূর্ণ কথা খুলে বলেন। তিনি এটাও বলেন যে, তারা আমাকে নানা রকম ভয়-ভীতি দেখিয়ে বলে যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের কাছে মুখ খুললে তুই সহ তার পরিবার হারিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত এলাকার একাধিক বাসিন্দা প্রতিবেদককে জানান, অত্র অঞ্চলের সন্ত্রাসীরা যখন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছিল, ঠিক তখনই রাশিদুল সুযোগ বুঝে সিঙ্গাপুর পালিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে পরিবেশ শান্ত হলে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে এসে বেপরোয়া চলাফেরা শুরু করেন। সেই সাথে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সাথে আঁতাত শুরু করেন এবং এলাকাতে সেলফিবাজ নেতা বলে পরিচিতি লাভ করেছে। ইতিমধ্যে এলাকাতে একটি চরমপন্থী বাহিনী তৈরি করেছে এবং তাদের কাছে প্রচুর পরিমাণে আগ্নেআস্ত্র আছে বলে আমরা জেনেছি। প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই দাবি এই চরমপন্থী সংগঠনের নেতা সহ সকলকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক এবং তাদের অস্ত্র ভান্ডার উদ্ধার করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।