করোনা মোকাবিলায় যে ভাবে সফলতার স্বাক্ষর রাখলো ভেড়ামারা হাসপাতাল
কোভিড-১৯। করোনা ভাইরাস। ভয়াবহ এক আতংকের নাম। করোনায় আক্রান্ত বাবা মাকে ফেলে পালিয়েছে সন্তান, মৃত সন্তানের ধারের কাছেও যায়নি পরিবার, স্বজনরা, এমন অহরহ ঘটনার মাঝে জীবন বিপন্ন জেনেও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা। করোনায় আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন, সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। শুধু ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ছেন ৫১৩ জন করোনা আক্রান্ত রুগী। আর বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা রুগীদের সেবা করে, সুস্থ করে তুলেছেন ৮৭০ জনকে। স্থানীয়রা বলেছেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুরুল আমীনের সময়োপযোগী কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়াই প্রান রক্ষা হয়েছে ভেড়ামারার বহু মানুষের। হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন করোনা আক্রান্ত রুগীরা।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এ নতুজানু হয়ে পড়ে কুষ্টিয়া। এর প্রভাব পড়ে ভেড়ামারাতেও। কুষ্টিয়াকে করোনা ডেটেকটিভ জেলা ঘোষনা করা হয়। কঠোর স্বাস্থ্য বিধি আরোপ করে লকডাউন ঘোষনা করে জেলা প্রশাসন। সীমানÍবর্তী এলাকা গুলোতে কঠোর সর্তকতা নেওয়া হয়। ভেড়ামারার প্রবেশমুখে পুলিশের চৌকি বসানো হয়। এসময়ের মধ্যে লাগামহীন ভাবে বাড়তে থাকে করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যু’র সংখ্যা। করেনা শনাক্ত হয় ১ হাজার ৮’শ ৮৭ জনার শরীরে। আক্রান্তদের হাসপাতাল এবং বাড়িতেই আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসময় হাসপাতালে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে ৫১৩ জন রুগী। বাকিরা সুস্থ হয় বাড়িতে আইসোলেশনে চিকিৎসকদের নিবীড় পরামর্শ এবং পর্যবেক্ষনে।
করোনা ভয়াবহতা যখন কুষ্টিয়া সহ ভেড়ামারাবাসীকে আতংকিত করে তুলেছে, মানুষের জীবন যখন সংকটাপন্ন তখন ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুরুল আমীন যুগান্তকারী বাস্তব কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহন করেন। উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বদের সহযোগিতা নিয়ে করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা নেন। গঠন করেন করোনা মোকাবিলা সেল। হাসপাতালের ৯ জন চিকিৎসক, সহকারী চিকিৎসক এবং নার্সরা দায়িত্ব পালন করেন। চালু করে লোকাল হটলাইন সেবা। ডাঃ শুভাসিস শাহা, ডাঃ মিজানুর রহমান, ডাঃ পলাশ চন্দ্র দেবনাথ পালাক্রমে বাড়িতে আইসোলশনে থাকা করোনা রুগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করেন। আর তা নিয়মিত মনিটরিং করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুরুল আমীন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালেও উপচে পড়া ভীড় ছিল করোনা আক্রান্ত রুগীদের। জুন-জুলাই মাসে করোনার প্রকপ সীমাহীন বেড়ে গেলে প্রচন্ড সংকট সৃষ্টি হয়। অক্সিজেন সংকটে হাহাকার পড়ে যায় চারিদিকে। মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে। এসময় ডাঃ নুরুল আমীন প্রশাসনিক এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের কাছে সহযোগিতা চান। সংগ্রহ করেন ছোট বড় দিয়ে ১০০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার। চিকিৎসকদের নিয়ে টিম গঠন সার্বক্ষনিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করেন। যার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠে করোনা আক্রান্ত রুগীরা। এসময় পদক্ষেপ নেন প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে হাসপাতালেই নির্মিত হবে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট। ইতোমধ্যে এর নির্মান কাজ শুরু হয়েছে।
ভেড়ামারার ধরমপুরের বিশিষ্ট পান ব্যবসায়ী উজ্জল হোসেন বলেন, করোনার ভয়াবহ সময়ে মানুষের একমাত্র আস্থার জায়গায় পরিনত হয়েছিল ভেড়ামারা হাসপাতাল। একটু অসুস্থতাতেই চলে আসতাম হাসপাতালে। করোনা রুগী শনাক্ত করে, চিকিৎসকরা তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে, রুগীদের দ্রুত সুস্থ করে তুলেছে।
ভেড়ামারা রেল বাজার বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক, বিশিষ্ট রাজনৈতিক আবু দাউদ বলেন, করোনায় ভীত সন্তস্ত ছিল ভেড়ামারার মানুষ। খুব কাছের বহু মানুষ করোনায় মারা গেছে। আত্বীয় স্বজন, পরিবার বর্গ পাশে থাকে নি। ভেড়ামারা হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ নুরুল আমীনের নেতৃত্বে চিকিৎসকরা সার্বক্ষনিক করোনা আক্রান্ত রুগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। মনোবল জুগিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। সে সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িৎ এবং বাস্তব পদক্ষেপ না নিলে আরো তাজা প্রান ঝড়ে যেতে পারতো।
ভেড়ামারা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুরুল আমীন বলেন, কঠিন একটা সময় পার করেছি আমরা।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসার ডাঃ আনোয়ারুল ইসলাম স্যারের পরামর্শে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ায় ভেড়ামারায় করোনায় মৃত্যুর হার কম এবং সুস্থতা অনেক বেশি। স্বল্প সময়ে করোনা শনাক্ত করতে এন্ট্রিজেন টেষ্ট করেছি ৩ হাজার ৭’শ ৫০ জনের। তিনি বলেন, বলা যেতে পারে করোনা মোকাবিলায় আমরা সফলতার স্বাক্ষর রেখেছি। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা আমাদের সহযোদ্ধা ছিল। করোনার ভয়াবহ তান্ডবের সময় অক্সিজেন সিলিন্ডার সেট সহ প্রদান করে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকেই। আমরা রুগীদের পাশে থেকে সুস্থ করে তুলেছি। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অক্সিজেন সিলিন্ডার গুলো রিফিল করা। প্রতিদিন অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে রুগীদের। এখন মানবতার সেবায় বৃত্তবানদের এগিয়ে আসার উপযুক্ত সময়। মহামারীতে সরকারের পাশাপাশি বৃত্তশালীদেও সহাবস্থান করা উচিত।