করােনার থাবায়- গাংনীর ২ গ্রামে মসজিদের মাইক থেকে শুধু মৃত্যুর খবর
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে করােনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। মরছে মানুষ। কাঁদছে গাঁড়াডােব ও জােড়পুকুরিয়া গ্রামবাসি। মরদেহ দাফনে ক্লান্ত কবর খননকারীরা। শােকে পাথর স্বজনহারারা। বিপাকে করােনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে শুয়ে শুয়ে কাঁতরানাে রােগীর স্বজনরা।
করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন মানুষ মারা যাচ্ছে। তবে করােনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে গত দু’মাসে গাংনী উপজেলার ধানখােলা ইউনিয়নের গাঁড়াডােব গ্রামে মরেছে ২১জন। এর মধ্যে করােনা আক্রান্তে ৪জন। বাকীরা করােনা উপসর্গ ও নিয়ে মারা গেছে। এছাড়াও একই উপজেলার সাহারবাটী ইউনিয়নের জােড়পুকুরিয়া গ্রামে করােনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ২৪ নারী-পুরুষ মারা গেছে। এর মধ্যে করােনা আক্রান্তে ১জন। বাকীরা করােনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে।
করােনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা করলে,তাদের পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বেশি বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।
সরেজমিনে গাঁড়াডােব ও জােড়পুকুরিয়া গ্রামের গােরস্থানে গেলে, চােখে পড়ে নতুন বাঁশের রেলিং দিয়ে সদ্য দাফন হওয়া মানুষের কবর সারিসারি ঘেরা।
করােনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে যারা মারা গেছেন। তারা হলেন-জোড়পুকুরিয়া গ্রামের কুলুপাড়ার মকছেদ আলী (৪৫), ইকতার আলী (৭৫),নকিম উদ্দীন (৫০),রোজিনা খাতুন (৬৫),তছির উদ্দীন (৮০),আব্দুল খালেক মহুরা (৮০),হালিমা খাতুন (৭৫),জমেলা খাতুন (৭৮),পল্টু আলী (২৭),করিম আলী (৮৫),রাবেয়া খাতুন (৬০),আব্দুল হামিদ (৭৫)। এদের ১ জন করােনা পজেটিব নিয়ে মারা গেছেন।
তবে বাকীদের নমুনা পরীক্ষা করা ছিলােনা। এছাড়াও গাঁড়াডোব গ্রামে চলতি ২ মাসে করােনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা ২১ জন। এরা হলেন-গাঁড়াডোব গ্রামের মিলি খাতুন (৪৫),বাবর আলী(৩৩),আনারুল ইসলাম (৭০), কবিতা খাতুন (২৫),বছের আলী (৮০),আব্দুল হালিম (৩২),মৌসুমী খাতুন (৩৫), মাছিরন নেছা (৫৫),মেকলি দাশী (৬৫), সুফিয়া খাতুন (৪৫),ফজলুল হক (৬২),সুরমান আলী (৬৫),কোরবান আলী (৬৪),কেরামত আলী (৫০), আবেদা খাতুন (৮০), রাশেদা খাতুন (৬০)। এদের মধ্যে ৪জন করােনা আক্রান্তে মারা গেছে। বাকীরা করােনা উপসর্গ ও বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে।
এদিকে স্ব-স্ব গ্রামের মসজিদের মাইকে রাত-দিন মৃত্যুর খবরে আঁতকে উঠছে গ্রামবাসি। ক্লান্ত হয়ে পড়েছে কবর খননকারীরা। গাঁড়াডোব গ্রামে কবর খোঁড়ার দায়িত্বপালনকারী আহাদুল ইসলাম জানান,প্রতি দিন-রাত মৃত্যুর খবরের কারণে কবর খননের জন্য আমাদের কয়েকজনকে প্রস্তুত থাকতে হয়। এতাে কবর খনন করার কারণে আমাদের ভিতর যেনো ভীতি কাজ করছে। এবং কবর খুঁড়তে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ কখন না আমরাই যদি করােনা আক্রান্ত হই। এ দু’মাসের কােন কােন সময় মরদেহ দাফন সম্পন্ন করে বাড়ি ফেরার আগেই আরেকজনের মৃত্যুর খবর আসে। আমার জীবনে অল্প সময়ে এক গ্রামের এতাে মানুষ মারা যাওয়া দেখিনি।
জোড়পুকুরিয়া গ্রামের কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি জানান, গ্রামের অধিকাংশ মানুষের জ্বর-সর্দি দেখা দিয়েছে। এর আগে এক সাথে এতাে মানুষের সর্দি-জ্বর দেখা যায়নি। নমুনা পরীক্ষা করলে,অধিকাংশ মানুষেরই করোনা সনাক্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় ধানখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান জানান, গাঁড়াডোবসহ ধানখোলা ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে প্রায়ই মানুষ মারা যাচ্ছে। মারা যাওয়া এসব মানুষ অধিকাংশই করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছে।
সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেকটি মানুষকে করোনা পরীক্ষা (টেস্ট) করার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। তারপরও করোনা পরীক্ষা করতে মানুষ অনীহা প্রকাশ করছে। মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডাক্তার নাসির উদ্দীন বলেন, ঠাণ্ডা কাশি যাদের হচ্ছে তারা যদি সচেতন হয় তাহলে, অনেক নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাদেরকে হাসপাতালে আসতে হবে প্রয়োজনে টেস্ট হতে হবে। তাছাড়া অনেকে তথ্য গোপন করছে বিধায় অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
করোনা চিকিৎসা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরীক্ষায় যদি কেউ পজিটিভ হন তাহলে, তার সুচিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু গোপন করলে তিনি যেমনি শারীরিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। তেমনি তার মাধ্যমে অন্য মানুষের শরীরেও ছড়িয়ে পড়ছে। তাই ভয় ভীতি উপেক্ষা করে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়ার আহবান জানালেন তিনি। ইতো মধ্য গাঁড়াডোব গ্রামে করোনা পরীক্ষার জন্য গণহারে নমুনা নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তবে পরীক্ষা করতে অনেকেই অনীহা দেখাচ্ছে।
এদিকে করােনা থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। তবে মাস্ক ব্যবহার শহরে হলেও গ্রামাঞ্চলে মাস্ক ব্যবহারের বালাই নেই। সরেজমিনে জানা গেছে, করােনা থেকে রক্ষা পেতে গ্রামাঞ্চলের মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেনা। শুধুমাত্র প্রশাসনের ভয়ে নামমাত্র মাস্ক কাছে রাখছে।