পিয়ন যখন প্রধান শিক্ষক
নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে জোরপূর্বক একই সাথে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার অভিযোগ রয়েছে মেহেরপুরের গাংনী সরকারি ডিগ্রী কলেজের পিয়ন ও এম বি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।
দীর্ঘদিন স্কুলে না গিয়েও বাড়িতে বসেই করেন স্কুলের অফিসিয়াল সকল কার্যক্রম। সেই সাথে তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর গাংনী সরকারি ডিগ্রী কলেজের পিয়ন হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। একই সময়ে তিনি ২০০৫ সালে উপজেলার এম বি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন।
একদিকে সরকারি ডিগ্রি কলেজে পিয়নের চাকরি করে সরকারি বেতন তুলছেন অন্যদিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ বাণিজ্য করছেন এই আনোয়ার হোসেন। একই সাথে দুটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। খাতা কলমে প্রধান শিক্ষক হলেও তিনি বিশেষ কোন অনুষ্ঠান ছাড়া বিদ্যালয়ে যায়না বলে জানান স্থানীয় এলাকাবাসী, ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এম বি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের প্রয়াত সভাপতি মোজাম্মেল হকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অবৈধভাবে তিনি নিয়োগ নেন যা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা জানেনা।
বিদ্যালয়টি ২০২৩ সালে এমপিও হলে আমার স্বাক্ষর জাল করে বাড়িতে বসেই ২৪ লাখ টাকার বিনিময়ে ৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ দেন আনোয়ার হোসেন। গাংনী সরকারি ডিগ্রী কলেজে চাকরিও করেন। তিনি দীর্ঘদিন স্কুলে না আসায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমি বিভিন্ন মহলে তার কর্মকান্ডের ব্যাপারে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগের বিষয়ে কোন কথা বলেননি পিয়ন ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আনোয়ার হোসেন। তবে তাকে চেপে না ধরে বাঁচিয়ে নেওয়ার জন্য সাংবাদিককে অনুরোধ করেন তিনি।
গাংনী সরকারি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মনিরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমার কলেজে ১৮ বছর ধরে বেতন উত্তোলন করছে আনোয়ার হোসেন। আমিও হঠাৎ করেই শুনছি তিনি একটি বিদ্যালয়ের নাকি প্রধান শিক্ষক।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ হোসনে মোবারক বলেন, আমি শোনার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি। শীঘ্রই এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ নেই। তদন্তপূর্বক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।