ঈদুল আযহা সামনে রেখে জমে উঠেছে গাংনী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশু হাট
ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশু হাটে ক্রেতা বিক্রেতা ভীড় করতে শুরু করেছে।প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই হাটটি ঐতিহ্য বহন করে আসছে মেহেরপুর জেলার।এই পশু হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।ব্যবসায়ীরা গরুর দড়ি ধরে আছে ক্রেতাদের আশায় আবার ক্রেতারাও খুঁজছে নিজের পছন্দমত গরু,ছাগল ও ভেড়া।জেলার চাহিদা পূরণ করে কোরবানি পশু রাজধানী ঢাকা সহ চলে যায় বিভিন্ন জেলায়।আর এই মুহূর্তে পশু বিক্রয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে খামারি ও বাড়িতে পশু পালনকারীরা।
কৃষকের বাড়িতে দু-একটি করে লালন-পালন হলেও খামারে রয়েছে অনেক গরু-ছাগল-ভেড়া। অনেক কৃষক শখের বসেই পারিবারিকভাবেই মহিষ পালন করে থাকে। গাংনীতে বেশ কয়েকটি ছাগল ও ভেড়ার বাণিজ্যিক খামার থাকলেও পারিবারিক খামারেও ছাগল ও ভেড়া বেশি পালিত হচ্ছে। বসতবাড়িতে দু-একটি গরু পালন করা প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক পরিবারের। সারা বছর গরু পালনের পর এখন এসেছে বিক্রয়ের সময়।গরু বিক্রির টাকায় মিটবে পরিবারের আর্থিক চাহিদা। বাড়তি অর্থ দিয়ে আবারও গরু কিনবে। এভাবেই চলে গরু পালনকারী পরিবারগুলো।
খামারি জিল্লুর রহমান বলেন, পারিবারিক খামারে গরু পালন করেছি।কোরবানির জন্য পশুগুলো বিক্রি করে দেব।এখন খুব ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে কুরবানী পশু নিয়ে।পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সহযোগিতা করছে পশুপালনে।
তিনি আরও বলেন,গো-খাদ্যের দাম বেশি ও তীব্র গরমে পশুপালণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
গরু ক্রয় করতে আসা মোঃ হামিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম।ছুটিতে বাড়ি এসেছি পরিবারের সাথে ঈদ করবো বলে।হাটে এসে দেখি গরু ও ছাগলের দাম অনেক বেশি।তারপরও ক্রয় করব।
ছাগল ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল বলেন,বামন্দী বাজারে বড় ছাগলের খুব চাহিদা।বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছাগলগুলা কিনে আনছি।আর গ্রামের লোকজন প্রায় প্রতিটা বাড়িতে ছাগল লালন পালন করে কোরবানি সামনে রেখে বিক্রি করে দেয়।এবার ছাগলের অনেক দাম।
গরু ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন,এবার গরুর বাজার দর ভালো রয়েছে।হাটে পর্যাপ্ত গরু উঠেছে আর গরুর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।আশেপাশের বামন্দীর মত বড় হাট আর নেই।দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা আসে এই বামন্দীর হাটে।
বামন্দী পশুহাট ইজারাদার সিরাজুল ইসলাম বলেন,মেহেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী এটি একটি পশুহাট।প্রায় দুইশ বছরের পুরোনো এই হাট ঐতিহ্য বহন করে আসছে। সপ্তাহে দু’দিন সোমবার ও শুক্রবার এ হাট বসে।কেউ জাতে প্রতারণার শিকার না হয় সেজন্য আমরা সব সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, গাংনী উপজেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩’শ ২টি পশু।এর মধ্যেও গরু ৪০ হাজার ৭৮০ টি,ছাগল ৯৪ হাজার ১’শ ৫১ টি,মহিষ ৪’শ ৩৫টি,ভেড়া ১ হাজার ৯’শ ৩৬ টি।চাহিদা রয়েছে ৪৫ হাজার ২’শ ৩৮ টি।উদ্বৃত্ত রয়েছে ৯২ হাজার ৬৪ টি
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন,গাংনী উপজেলায় কোরবানিযোগ্য যা পশু প্রস্তুত রয়েছে তা গাংনী সহ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার কোরবানি পশুর চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে বেশি পশুর যোগান রয়েছে গাংনী উপজেলায়।
তিনি আরও বলেন,মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় সবচেয়ে বড় পশুরহাট বামন্দী।সপ্তাহে দুই দিন শুক্র ও সোমবার এই হাট বসে।হাটে কোন পশু অসুস্থ হয়ে গেলে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আমাদের মেডিকেল টিম সেখানে রয়েছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা ‘আজকের পত্রিকাকে’ বলেন, ঈদকে সামনে রেখে যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য বামন্দী পশুহাটে পর্যাপ্ত পুলিশ প্রশাসন,জাল নোট সনাক্ত করার মেশিনসহ সব ব্যবস্থা রয়েছে।