মুজিবনগর প্রতিদিন ডেস্কঃ
সেই উত্তাল একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের তরফে কলকাতার কিছু সাংবাদিককে বলে রাখা হয়েছিল, ১৭ এপ্রিল ভোরে প্রেস ক্লাবে উপস্থিত থাকতে। ভারতের কৃষ্ণনগর, চাপড়া, হৃদয়পুর হয়ে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় সীমান্ত পেরিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভূখন্ড আমবাগান ঘেরা বৈদ্যনাথ তলায়। সেখানে তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের গ্রথম সরকার (মুজিবনগর সরকার)। সাংবাদিক বৈঠকও হয়। এর পরে ওই পথেই কলকাতায় ফিরে আসেন সাংবাদিকরা।
সেই স্মৃতি বিজড়িত সীমান্ত এলাকা বৈদ্যনাথ তলার নাম সেই দিনই দেওয়া হয় মুজিবনগর। এই সীমান্তবর্তী এলাকাকে স্মরণীয় করে রাখতে সেখানে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতের নতুন দরজা তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েছে দিল্লি ও ঢাকা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গত বছরের ঢাকা সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে স্থির হযেছিল, চাপড়া থেকে হৃদয়পুর হয়ে মুজিবনগর পর্যন্ত ওই ঐতিহাসিক রাস্তাটির নামকরণ করা হবে ‘স্বাধীনতা সড়ক।
নামে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ হলেও সেখানে ভিসা ইমিগ্রেশনের বন্দোবস্তনা থাকায় মানুষের যাতায়াত ছিল না। ইতিমধ্যে মেহেরপুরের মুজিবনগর স্থলবন্দরের জন্য স্থল কাস্টমস স্টেশন অবিলম্বে চালু করার জন্য গেজেট প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে মুজিবনগর স্থল কাস্টম স্টেশন। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অভ্যন্ত্রীণ সম্পদ বিভাগ গেজেট প্রকাশ করেছে। গেজেটে বলা হয়েছে মুজিবনগর স্বাধীনতা সড়ক হয়ে ভারতের নদীয়া জেলার চাপড়া-কৃষ্ণনগর সড়ক দিয়ে
ভারতে যাত্রী চলাচল ও পণ্য আমাদানী ও রপ্তানী করা যাবে। তবে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত কেবল যাত্রী চলাচল করতে পারবে।
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহম্মদ ইমরান সম্প্রতি নদিয়ার হৃদয়পুর হয়ে মুজিবনগর সীমান্ত ঘুরে দেখে গেছেন। অবকাঠামো নির্মানের বিষয়ে স্থান দ্রত কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই সেখানে ভারত এবং বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের চেক পোস্ট রয়েছে। বাংলাদেশের দিকে কাস্টমস আর ভিসা ইমিগ্রশন পয়েন্ট তৈরির জন্য পরিকাঠামো গড়ার কাজ প্রায় শেষ। ভারতের দিকে পরিকাঠামো যাতে হয়, সে ব্যাপারে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে। হাইকমিশনার মহম্মদ ইমরান জানান, সেখানকার স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁর মনে হয়েছে নতুন চেক পোস্ট-এর বিষয়ে সবাই আগ্রহী।
অতিদ্রতম অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরম্ন হবে। মুজিবনগরে কাস্টমস আর ভিসা ইমিগ্রেশন পয়েন্ট তৈরির জন্য ৩০ একর জমিও নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে মুজিবনগর কাস্টমস স্টেশন আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে এমন খবরে রাতারাতি বেড়েছে সেখানকার জমির দাম। কৃষি জমি থেকে শুরু করে বসতি জমির দাম বেড়েছে ২৫-৩০ গুন। বাগোয়ান ইউনিয়নের সোনাপুর, ভবেরপাড়া মৌজাই সরকারি মূল্য শতক প্রতি ১৫ হাজার টাকা। যা বছর তিনেক আগেও এই দামে বিক্রি হয়েছে সেখানকার জমি। তবে মুজিবনগর স্থল কাস্টমস স্টেশন হওয়ায় সেখানকার জীবন-মানের আমুল পরিবর্তন এসেছে। রাতারাতিই পাল্টে গেছে ভবেরপাড়ার চিত্র। এখন সেখানকার জমির মালিকরা শতক প্রতি দাম হাঁকাচ্ছেন ৪-৫ লাখ টাকা। দির্ঘদিনের অবহেলিত এই গ্রামটিসহ মুজিবনগরের আশেপাশের কৃষি থেকে শুরম্ন করে বানিজ্যিক জমি, সব ধরনের জমির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুন দাম বেড়েছে।
মেহেরপুর-মুজিবনগর প্রধান সড়কের পাশের জমির। অনেকেই বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মানের পরিকল্পনাও শুরু করেছে।
মুজিবনগর অনন্যা পার্কের সত্ত্বাধীকারী হাসানুজ্জামান লাল্টুর প্রায় তিন একর জমি অধিগ্রহন করছে সরকার। তারপরও কিছু বানিজ্যিক জমি অবশিষ্ট থাকবে লাল্টুর। সেখানে মানসম্মত একটি আবাসিক হোটেল নির্মানের পরিকল্পনা করছেন তিনি। লাল্টু জানান, ইতিমধ্যে বেশ কিছু খদ্দের জমিটি কিনতে চেয়েছে চড়া দাম দিয়ে। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমি বিক্রি করিনি। মুজিবনগরে কোন মনসম্মত আবাসিক হোটেল নেই। বাইরের পর্যটকরা এখাসে এসে তাদের মেহেরপুর শহরে গিয়ে থাকতে হয়।
জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়াকে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের বহিঃপ্রকাশ মনে করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন সরকার। তার মতে মুজিবনগর স্থল কাস্টম স্টেশনটি চালু হলে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এলাকার জমি-জমার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা এখন ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের চাষ আবাদে। কাস্টম স্টেশনটি চালু হলে সেসব জমি গুলোই গড়ে উঠবে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহম্মদ ইমরান খান জানিয়েছেন, স্বাধীনতা সড়ক বরাবর নতুন ইমিগ্রেশন পয়েন্ট ঘোষণা করা যায়, সে জন্য উঠে পড়েছে লেগেছে দুই সরকার। বিষয় হল, সেখানে এগজিট এবং এন্ট্রির জন্য ছশো মিটার রাস্তা পাকা করতে হবে এবং সেটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হতে ভারতীয় কেন্দ্র সরকার পশ্চিমবঙ্গকে বলেছে। সেখানে ভিসা ইমিগ্রেশন পয়েন্ট খোলা হলে দুদেশেরই দু’প্রান্ত্মেরই অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
জনপ্রসাশন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর ১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন বলেন, অবকাঠামো নির্মানের এক্ষেত্রে দ্রতম সময়ে দুদেশ কাজ শুরু করবে। ইতিমধ্যে ৩০ একর জায়গা নেয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে। স্থল কাস্ট স্টেশনটি চালু হলে মুজিবনগর-মেহেরপুর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যাবে। এলাকার আর্থসামাজিকের ব্যাপক উন্নয়ন হবে।