“আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ পরস্পরের পরিপূরক”
ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গ থেকে পূর্ব বাংলা এবং পাকিস্তান আমলে পঞ্চাশের দশকে পূর্ববাংলা থেকে পূর্ব পাকিস্তানে রুপান্তরিত হয় আমাদের এই ভূখন্ড। তবে পাকিস্তানের শোষণ, বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন, সংগ্রাম এবং দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ই বাঙালির গৌরবময় ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৭৫৭-১৯৭১ দীর্ঘ ২১৪ বছর ধরে বাঙালীর আকাঙ্খা ছিল একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ড। যে আকাঙ্খার বাস্তবায়ন ঘটেছে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ এর নেতৃত্বে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন ভাগিরথী নদীর তীরবর্তী পলাশীর আম্রকাননে বাঙালির স্বাধীনতার যে লাল সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, অলৌকিকভাবে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার দিনটিও মিলে গিয়েছিল সেই দিনটির সাথে। ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গণমানুষের সংগঠনটি।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্মের সাথে মুসলিম লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল হক নেতৃত্বাধীন ঢাকার ১৫০ নম্বর মোগলটুলিস্থ পূর্ববঙ্গ মুসলিম লীগ কর্মি শিবির ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কর্মি শিবিরটি ছিল ঢাকার প্রভাবশালী মুসলিম লীগ নেতা শওকত আলীর মালিকানাধীন তিনতলা ভবনের নিচতলায়। কর্মি শিবিরের সকল খরচ চালাতেন শওকত আলি। তিনি ছিলেন ‘৪৮ এ শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলনের প্রথম সারির কর্মি এবং কর্মি শিবিরের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তবে কর্মি শিবির প্রতিষ্ঠার নেপথ্যের কারিগর ছিলেন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতা গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারন সম্পাদক প্রখ্যাত ইসলাম ধর্মীয় পন্ডিত আবুল হাশিম। এই কর্মি শিবির থেকেই ভাষা আন্দোলনের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হত।
১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর নাজিমুদ্দিন এবং মাওলানা আকরাম খাঁর নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগের রক্ষণশীল অংশের নেতারা শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তাদের পরোক্ষভাবে সমর্থন দেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। নাজিমুদ্দিন সোহরাওয়ার্দীকে ‘ভারতের এজেন্ট’ এবং ‘পাকিস্তানের শত্রু’ হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য পদ থেকে বরখাস্ত করেন। ফলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং আবুল হাশিম নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে মুসলিম লীগের মনোনয়নে উপনির্বাচনে টাঙ্গাইলের একটি আসন থেকে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। তবে মুসলিম লীগ সরকারের পূর্ব বঙ্গের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করতে থাকেন তিনি। এ কারনে তার নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ আখ্যায়িত করে তাকে হয়রানী করার হীন উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে মুসলিম লীগ সরকার। পূর্ব বঙ্গের গভর্ণর এক নির্বাহী আদেশ বলে তার নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে ব্যবস্থাপক সভার উক্ত আসন শূন্য ঘোষণা করেন। মাওলানা ভাসানী আসাম চলে যান। তাকে আটক করে ধুবড়ী কারাগারে রাখা হয়।
পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালের ২৬ শে এপ্রিল ঐ আসনে পুনরায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মুসলিম লীগের ধনাঢ্য প্রার্থী জমিদার খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে ১৫০ মোগলটুলি কর্মি শিবিরের নেতাদের সিদ্ধান্তে প্রার্থী করা হয় শামসুল হককে। কর্মি শিবিরের নেতারা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে, কেউ হাতঘড়ি বিক্রি করে, কেউ বাইসাইকেল বিক্রি করে নির্বাচনী ফান্ড তৈরি করেন। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে এই নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন এবং নির্বাচনী ফান্ড গঠনের বিষয়ে উল্লেখ আছে। নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থীর কল্যাণে মানুষ প্রথম মাইকের ব্যবহার দেখেন। মুসলিম লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন সহ অসংখ্য মন্ত্রী এবং হেভিওয়েট নেতারা খুররম খান পন্নীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। অন্যদিকে শামসুল হকের পক্ষে ১৫০ মোগলটুলি কর্মি শিবিরের কয়েকজন কর্মি ছাড়া উল্লেখযোগ্য তেমন কোন বড় নেতা ছিলেন না। নির্বাচনে শামসুল হক বিপুল ভোটের ব্যবধানে মুসলিম লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী খুররম খানকে পরাজিত করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। জমিদার খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে শামসুল হক কোন বিবেচনাযোগ্য প্রার্থী ছিলেন না বলে সবাই মনে করতেন। অথচ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হন। এই রায় যতটা না ছিল খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে তার চেয়ে ছিল মুসলিম লীগ সরকারের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে। এই পরাজয়ে মুসলিম লীগ সরকারের ভীত কেঁপে যায়। ফলে ঐ উপনির্বাচনের পর ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আর কোন উপনির্বাচন দেয়নি প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকার। তবে বিজয়ী শামসুল হকের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। নির্বাচনে বিপুল বিজয় মোটেও সুখকর হয়নি তার জন্য। পূর্বের ন্যায় একই কায়দায় আবারো নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করা হয়।
এভাবে প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের একের পর এক জনবিরোধী কর্মকান্ডের ফলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, শওকত আলী সহ মুসলিম লীগ কর্মি শিবিরের নেতাদের মনে মুসলিম লীগের প্রতি বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এমনি এক সময়ে পূর্ব বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ নেতা দবিরুল ইসলামের পক্ষে “হেবিয়াস কর্পাস” মামলা লড়তে ঢাকায় আসেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এ সময় সোহরাওয়ার্দীর সাথে তার পূর্ব থেকে ঘনিষ্ঠ মুসলিম লীগ কর্মি শিবিরের ব্যবস্থাপক শওকত আলীর কথা হয়। সোহরাওয়ার্দী এ সময় তাকে মুসলিম লীগ ছেড়ে নতুন দল গঠনের নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে শওকত আলী কর্মি শিবিরের নেতৃবৃন্দকে নতুন দল গঠনে উদ্বুদ্ধ করেন।মাওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ঢাকা আসেন। ঢাকায় এসে তিনি আলী আমজাদ খানের বাসায় অবস্থান করেন। মুসলিম লীগ কর্মি শিবিরে তার পূর্বে আসা যাওয়া না থাকলেও ইয়ার মোহাম্মদ খানের সাথে তার যোগাযোগ ছিল। শওকত আলী মাওলানা ভাসানীকে আলী আমজাদ খানের বাসায় আলোচনার সময় ১৫০ নম্বর মোগলটুলিস্থ কর্মি শিবির ও মুসলিম লীগ ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের রাজনৈতিক কার্যক্রমের কথা অবহিত করেন। পরবর্তীতে মুসলিম লীগ কর্মি শিবিরের উদ্যোগে মুসলিম লীগের বিকল্প একটি রাজনৈতিক দল গঠনে ঐকমত্য হয়।
মুসলিম লীগ সরকার এ ধরনের উদ্যোগের বিষয়ে টের পেয়ে কর্মি শিবিরের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে শামসুল হকের টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনের ঠিক দুইদিন পূর্বে ২৪ শে এপ্রিল গ্রেফতার করে নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। অনেককে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখানো হয়। কিন্তু মুসলিম লীগ সরকারের এসব অপকর্ম কোন কাজে আসে নি। দল গঠনের প্রত্যয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এক কর্মি সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সরকারি বাধার মুখে উপযুক্ত জায়গা না পাওয়া গেলে অবশেষে কাজী হুমায়ুন বশীর এবং ইয়ার মোহাম্মদ খানের ইচ্ছায় ঢাকার কে এম দাস লেনের তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রাসাদতূল্য বাসভবন ঐতিহাসিক “রোজ গার্ডেন” এ প্রায় ৩০০ কর্মির উপস্থিতিতে ২৩ শে জুন বিকেল তিনটায় উক্ত কর্মি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রখ্যাত আইনজীবি আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে ঐ কর্মি সম্মেলনে “পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ” নামক রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে করা হয় সাধারন সম্পাদক।
ঐ সময় ভারত উপমহাদেশের সমসাময়িক কোন রাজনৈতিক সংগঠনে যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পদ না থাকলেও কর্মি শিবিরের তরুণ জনপ্রিয় সংগঠক শেখ মুজিবুর রহমানকে যথাযথ মূল্যায়ন করার প্রত্যয়ে সংগঠনে যুগ্ম সম্পাদক পদ সৃষ্টি করে ১ নং যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। কথিত আছে, শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নং যুগ্ম সাধারন সম্পাদক করার জন্য শওকত আলি মাওলানা ভাসানিকে অনুরোধ করেছিলেন। তবে শেখ মুজিবের চেয়ে বয়সে সিনিয়র হওয়ায় খন্দকার মোসতাক আহমদ চেয়েছিলেন ১ নং যুগ্ম সম্পাদকের পদ। এ নিয়ে তিনি মাওলানা ভাসানিকে অনেক অনুনয়, বিনয় করেছিলেন বলেও কথিত আছে। তবে শেখ মুজিবের সাংগঠনিক দক্ষতার কারনেই তাকে উক্ত পদে মনোনীত করেছিলেন মাওলানা ভাসানি এবং শামসুল হক।শেখ মুজিব এ সময় কারান্তরীণ ছিলেন। নতুন এ দলটির প্রতিষ্ঠার ৫-৬ দিন পর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় ‘৫৩ সালের যে সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ঐ কমিটিতেও আওয়ামী মুসলিম লীগে কোন যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পদ ছিল না। দলের কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছিল ঢাকার ঐ সময়ের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি ইয়ার মোহাম্মদ খানকে। দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে তার অনেক অবদান ছিল এবং তিনি দলকে শক্তিশালী করতে অকাতরে অর্থ ব্যয় করতেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের অনেক নেতার ঢাকায় থাকার সকল খরচ তিনি বহন করতেন।
আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম কমিটির অধিকাংশ কর্মকর্তা এবং সদস্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন মাওলানা ভাসানী যাদের কারো কারো পূর্বে কোন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল না। দল গঠন এবং পরবর্তীতে সংগঠনটির বিকাশে তাদের অনেকের কোন ভূমিকা ছিল না। পরবর্তীতে অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যান, অনেকে দল থেকে পদত্যাগ করেন। এই ঘটনায় আওয়ামী মুসলিম লীগের কমিটি গঠনে মাওলানা ভাসানীর সাংগঠনিক মুন্সিয়ানা সম্পর্কে প্রশ্ন থেকে যায়। তবে দল গঠন পরবর্তীতে তিনি যোগ্যতার সাথে নেতৃত্ব দেন। ২৩ শে জুনের কর্মি সম্মেলনে সাধারন সম্পাদক শামসুল হক পূর্ব বাংলা ও পাকিস্তানের সকল ইউনিটের আত্মনিয়ন্ত্রণের পূর্ণ অধিকার প্রদানের দাবিসহ নতুন এ সংগঠনটির জন্য একটি সময়োপযোগী খসড়া ম্যানিফেস্টো প্রণয়ন করেছিলেন। যার ফলে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে মানুষ জানতে পেরেছিল। তবে তিনি বেশিদূর দলকে অগ্রসর করতে পারেন নি। কারন শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি তিনি এবং দলের সভাপতি মাওলানা ভাসানী কিছু দিনের মধ্যেই ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি গ্রেফতার হন। টানা প্রায় ২৬ মাস জেল খাটার পর ভগ্ন শরীর নিয়ে শেখ মুজিব ১৯৫২ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেলেও শামসুল হক তখনো জেলে ছিলেন।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর শেখ মুজিবের শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে প্রায় দুই আড়াই মাস টুঙ্গিপাড়ার বাড়িতে থেকে চিকিৎসা ও বিশ্রাম নেন। অতঃপর ১৯৫৪ সালের ৩০ মে গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই দুই বছর সময় তিনি আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। দলের সাধারন সম্পাদক শামসুল হক এ সময় কারাভ্যন্তরে থাকায় দলের ১ নং যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শেখ মুজিব দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পান। দল গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে এই দুই বছরই ছিল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিস্তারকাল। যার পুরোভাগে নেতৃত্বে ছিলেন তরুণ সংগঠক মুজিব। ‘৫৩ সালের সম্মেলনের কিছুদিন পূর্বে শামসুল হক কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও সরকারের নির্যাতন এবং সুন্দরী স্ত্রীর দুই ফুটফুটে কন্যা সন্তানসহ তাকে ছেড়ে যাওয়ার মানসিক চাপে তার মস্তিষ্ক বিভ্রাট ঘটে। ফলে তিনি দল থেকে বহিস্কার হন এবং সম্মেলনে নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়েন। সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান দলের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগকে শুধুমাত্র মুসলমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ১৯৫৫ সালে সকল ধর্ম, বর্নের মানুষের অংশগ্রহণে একটি অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে দলের সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম খান, খন্দকার মোশতাক আহমদ সহ অনেকেই মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন। তবে শেষমেশ বঙ্গবন্ধুর জোরালো প্রচেষ্টার কারনে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতে সংগঠনের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। ১৯৫৬ সালে দলের সাধারন সম্পাদক বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীত্ব গ্রহণ নিয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অলি আহাদের নেতৃত্বে একটি অংশ দলের মধ্যে বলয় সৃষ্টির অপচেষ্টা চালান।সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত বিচক্ষণ বঙ্গবন্ধু সংগঠনকে শক্তিশালী করার স্বার্থে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করে দলের সাধারন সম্পাদক পদে বহাল থাকেন। কারন বঙ্গবন্ধু জানতেন এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে শক্তিশালী সংগঠনের কোন বিকল্প নেই।
পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে দলের সাধারন সম্পাদকের পদ ধরে রাখা বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক নৈপুণ্যেরই পরিচায়ক।সেদিন বঙ্গবন্ধু ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রটি আজও পেতাম কিনা সন্দেহ আছে।বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর এই সিদ্ধান্তটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকবে। ১৯৫৭ সালের ৭-৮ ফেব্রুয়ারি কাগমারী সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি মাওলানা ভাসানীর পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল এবং পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রেক্ষিতে মাওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে ভূমিকা নেন।সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দলের বেশিরভাগ নেতা মাওলানা ভাসানীর প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ কারনে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ইয়ার মোহাম্মদ খান, অলি আহাদ সহ অনেক নেতা আওয়ামী লীগ থেকে ১৮ ই মার্চ পদত্যাগ করেন।
আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে মাওলানা ভাসানী ‘ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি’ গঠন করলেও বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি ভাসানী সাহেবের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নি। মাওলানা ভাসানীর পদত্যাগের পরও পরবর্তীতে ৫৭ সালের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছায় তাকেই আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশকে। সহ-সভাপতির তিনটি পদ এবং ইয়ার মোহাম্মদ খানের সম্মানে কোষাধ্যক্ষ পদটিও ফাঁকা রাখা হয়। রাজনীতিতে এ ধরনের নজীর বিরল। ৫৭-৬৪ দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়েই চলেছে আওয়ামীলীগ। এ সময় মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে থাকলেও মূলত সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন দলের সাধারন সম্পাদক বঙ্গবন্ধু। ৬৬ তে ৬ দফা দেওয়ার পর দলের অনেক নেতা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে,৬ দফার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা তর্কবাগীশ ৬ দফার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ৬৬’র সম্মেলনে নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়েন। বঙ্গবন্ধু দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারন সম্পাদক হন তাজউদ্দিন আহমদ।
সেই সম্মেলনে সমাপনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন-“৬ দফার প্রশ্নে কোন আপোষ নেই। রাজনীতিতেও কোন সংক্ষিপ্ত পথ নেই। নেতৃবৃন্দের ঐক্যেও আওয়ামীলীগ আর আস্থাশীল নয়। নির্দিষ্ট আদর্শ ও সেই আদর্শ বাস্তবায়নে নিবেদিতপ্রাণ কর্মিদের ঐক্যেই আওয়ামীলীগ আস্থাশীল। আওয়ামী।লীগ নেতার দল নয়, এ প্রতিষ্ঠান কর্মিদের প্রতিষ্ঠান।”
বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন-“সাঁকো দিলাম, স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য। এই আন্দোলনে কেউ যদি নাও আসে আমরা একাই রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাব।ভবিষ্যত ইতিহাস প্রমাণ করবে আমাদের মুক্তির জন্য এটাই সঠিক পথ।” বস্তুত ৬ দফায় ছিল বাঙালীর স্বাধীনতার বীজমন্ত্র তথা অঙ্কুর।
৬ দফার আন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বারবার কারাবরণ করেছেন। ৬ দফা দেওয়ার পর দাবি আদায়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু ৩৫ দিনে ৩২ টি জনসভা করে ৮ বার গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু ৬ দফার প্রশ্নে আপোষ করেন নি। ৬ দফা আন্দোলনে আটক বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু সহ রাজবন্দীদের মুক্তির আন্দোলন এক পর্যায়ে ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে রুপ নিয়েছিল।
গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু মুক্ত হয়েছিলেন এবং তুমুল আন্দোলনে স্বৈরশাসক লৌহমানব আইয়ু্ব খানের পতন হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু জানতেন- জনরায় ছাড়া, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া বাঙালীর আকাঙ্খিত স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। এ কারনেই তিনি নির্বাচনের দাবি করেছিলেন এবং ৭০’র নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। অথচ মাওলানা ভাসানী সহ অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সে নির্বাচনে অংশগ্রহণে তীব্রভাবে আপত্তি জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রমাণ হয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনতার বিপুল ম্যান্ডেট বাংলার মানুষের স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন যে যৌক্তিক ছিল সেটিই বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দেয়। তবে কেন্দ্র ও প্রদেশে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু ৭ ই মার্চ রেসকোর্সের ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে উপস্থিত মিলিয়ন জনতার মনের ঘোষণার সাথে সুর মিলিয়ে কবিতার ছন্দে ঘোষণা করেন তার অমর বাণী-
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যাতে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে আখ্যায়িত না করতে পারে সেজন্য কৌশলে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে পাকিস্তানি শাসকের জন্য মানার অযোগ্য চারটি শর্তে আলোচনার দ্বার খোলা রাখেন। স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ ঘোষণা না করে বঙ্গবন্ধু একদিকে যেমন হায়েনার মত সমাবেশে তাক করে রাখা লক্ষ বুলেটকে সুপ্তাবস্থায় অঙ্কুরে বিনষ্ট করেছিলেন, তেমনি
“তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক।”
ভাষণের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ প্রস্তুতির সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন।
পাকিস্তানের আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীত্বের শপথ না নিলেও পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মানতে শুরু করে। রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন জনতার অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী। ২৩ শে মার্চ পাকিস্তান দিবসে সূর্যোদয়ের পরপরই বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাসভবনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। এদিন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী জোরালো হয় অসহযোগ আন্দোলন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এমন অসহযোগ আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ২৫ শে মার্চের কালরাত্রের পৈশাচিক গণহত্যার পর নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালি ফুঁসে উঠে বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের কালজয়ী ভাষণের অনুপ্রেরণায়।
“প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।” বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের মাধ্যমে নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালি সেদিন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে রুপান্তরিত হয়েছিল সশস্ত্রে।
২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন-
“হয়ত এটাই আমার শেষ বার্তা।
আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।”
সাড়ে সাত কোটি বাঙালির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা ঘোষণা করার অপরাধে বন্দি করে পাকিস্তানের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৭০’র নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে গঠিত হয় মুজিব নগর সরকার। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন মুজিব নগর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী চার জাতীয় নেতা। প্রায় ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লক্ষ শহিদ এবং ২ লক্ষ মা, বোনের সম্ভ্রম, কোটি কোটি মানুষের ত্যাগ এবং পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ২৮৩ দিনের নির্মম, নিষ্ঠুর মানসিক নির্যাতন আর ঘুমহীন রাতের বিনিময়ে অবশেষে ১৬ ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের অসহায় আত্মসমর্পনের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। কেবল মাত্র বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নয়, ‘৪৮ এবং ৫২’র ভাষা আন্দোলনে ও নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ। বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বাংলাদেশের বিজয়ের ২৩ দিন পর ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারি তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পূনর্গঠনে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। জাতীয় চার নেতাকে কারা অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দেশে রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে জেল থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা এবং জেলহত্যার বিচার করা যাবে না মর্মে আইন পাশ করা হয়। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকে বন্দী করে নির্মম নির্যাতন করা হয়। দেশে আইনের শাসন ভুলুন্ঠিত হয়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার সব রকম প্রচেষ্টা করা হয়। মানুষের ভোটাধিকার হরণ এবং গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে দেশে চালু করা হয় কারফিউ গণতন্ত্র। আওয়ামী লীগ রাজপথে রুঁখে দাঁড়ায়। ১৯৮১ সালের ১৭ ই মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অবৈধ সামরিক সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দেশে ফিরে এসে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু কন্যা। ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয়ের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে স্বল্পোন্নত বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল বাংলাদেশে রুপান্তরিত করেন।
রাষ্ট্র পরিচালনায় শুধু নয়, বরং বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটের রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র সফলভাবে মোকাবিলা এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড শক্ত হাতে প্রতিহত করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছেন সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। নিজ দল ও সরকারের দূর্নীতিবাজ নেতা, এমপি, মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তিনি। ১৯৮১-২০২২ দীর্ঘ ৪১ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। বারবার তার উপর গ্রেনেড, গুলি, বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে বাঙালির আকাঙ্খিত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশ ও জনগণের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। আজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যখন আর্টিকেলটি লিখছি, এর ঠিক দু’দিন পরেই ২৫ জুন, স্বাধীনতার পর বাঙালির সবচেয়ে বড় অর্জন নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সকল অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে যেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতিকে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিল, বঙ্গবন্ধু কন্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে তেমনিভাবে দেশ ও জাতি সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করবে ইনশাআল্লাহ্! আজ ২৩ জুন ২০২২, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সকলকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা।
মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা, খুলনা।